সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বুধবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার বাদী ও রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী সাক্ষ্য প্রদান করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রায়হানের মা সালমা বেগম ও চাচার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে। মামলায় মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৬৯ জনকে।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি নওশাদ আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘বুধবার মামলার বাদী তাহিমনা আক্তার তান্নীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের প্রস্তুতি নেই বলে সময় চান। আদালত তাদেরকে একদিন সময় দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তারা বাদীকে আবার জেরা করবেন। জেরা শেষ হওয়ার পর আরও দু'জন সাক্ষী স্ট্যান্ডবাই আছেন, তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রায়হান হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পিটিশন দিয়েছেন। তারা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে আদালতে আবেদন জানান।
এ প্রসঙ্গে পিপি নওশাদ চৌধুরী বলেন, ‘আসামিপক্ষ যে মহামান্য হাইকোর্টে গিয়েছেন, সেটার ওপর দীর্ঘ শুনানি হয়েছে। আমি বলেছি, এই মুহূর্তে এটা স্থগিত রাখার কোনো আইন নাই। হাইকোর্ট থেকে তারা যদি স্টে অর্ডার আনতেন, তাহলে শুনানি স্থগিত করার সুযোগ ছিল। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কোনো নির্দেশ ছাড়া একটা নাম্বার দিয়ে ফাইল করেছেন। তাদের রিভিশন হাইকোর্টের কোন বেঞ্চে আছে, কবে নাগাদ হবে, এগুলোর কোনো দিকনির্দেশনা নাই। একটা সেনসেশনাল চলমান মামলা এভাবে অহেতুক বিলম্ব করা যায় না। যদি হাইকোর্ট কোনো আদেশ দেন এবং আসামি পক্ষ যদি আদেশ নিয়ে আসতে পারেন তবে হয়তো সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ হহতে পারে।’
এদিকে, রায়হান হত্যা মামলার পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে ‘স্টেট ডিফেন্স’ করবে বলে জানিয়েছেন পিপি নওশাদ।
রায়হান হত্যা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। তবে একজন আইনজীবীর মৃত্যুতে কোর্ট রেফারেন্স থাকায় এবং আসামিপক্ষ হাইকোর্টে পিটিশনের কথা জানানোর প্রেক্ষিতে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
রায়হান হত্যা মামলাটি হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন তৎসহ ৩০২ দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা ও ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষ শুধুমাত্র হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলাটি চালাতে চান। এজন্য অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে গেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বুধবার দুপুরে রায়হান হত্যা মামলার আসামি বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ অন্যান্যদের কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিমের আদালতে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে রায়হান হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। এর আগে ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ থাকলেও সেটি পিছিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে সে বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। গত বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অপরজন কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহ আল নোমান। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন