১৭ মে, ২০২২ ২১:৩২

সিলেটে বন্যার চরম অবনতি, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে বন্যার চরম অবনতি, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

সিলেটে বন্যার চরম অবনতি।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উজানে ভারতের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবারও সিলেটের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। নতুন করে বিভিন্ন জনপদ প্লাবিত হয়েছে। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার পানি আরও বেড়েছে। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট ২৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অন্তত ১৫ কিলোমিটার তলিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলারও প্রায় ৭০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা সদরের সকল অফিসে পানি উঠে যাওয়ায় দাপ্তরিক কাজ পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের বেগ পেতে হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি মঙ্গলবার আরও বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক তলিয়ে না যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অন্য সকল আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যায় উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। তবে বেসরকারি মতে, এই সংখ্যা দ্বিগুণ। বন্যার্তদের জন্য সরকারিভাবে ২০ মেট্রিক টন চাল ও প্যাকেটজাত শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় ৫৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল মঙ্গলবার নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার পাহাড়ি ঢলে সারি ও বড়গাঙের পানি বেড়েছে।

নতুন করে উপজেলার দরবস্ত, ফতেহপুর, জৈন্তাপুর, চিকনাগুলের নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। ফলে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সারি ও সুরমার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে নদী দুটির পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ।

জকিগঞ্জে মঙ্গলবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুশিয়ারার পানি ডাইক উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। আসামের পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টির পানি বরাক নদী দিয়ে সুরমা-কুশিয়ারায় প্রবেশ করায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি ডাইক উপচে ভেতরে প্রবেশ শুরু করে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জকিগঞ্জ ইউনিয়নের রারাই, বাখরশাল, মানিকপুর এবং বীরশ্রী ইউনিয়নের উজিরপুর ও সুপ্রাকান্দিসহ বেশ কিছু এলাকা। সুরমার ডাইক ভেঙে উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের আটগ্রাম বড়বন্দ, মানিকপুর ইউনিয়নের আকাশমল্লিক ও বারহাল ইউনিয়নের বারহাল এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জকিগঞ্জে পানিবন্দী রয়েছেন ২০ হাজার মানুষ। তবে স্থানীয়দের দাবি এ সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার পর্যন্ত পানিবন্দী মানুষের জন্য উপজেলা প্রশাসন বরাদ্দ পেয়েছে ১৮ মেট্রিক টন চাল।

এদিকে, সিলেট নগরীতেও সুরমা নদীর পাড় উপচে ও ছড়া-খাল দিয়ে পানি ঢুকছে। সুরমা তীরবর্তী নগরীর পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর