চট্টগ্রাম নগরীতে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ওই স্কুলছাত্রীর নাম ইনহাস বিনতে নাছির। নিহত ইনহাসদের বাসা বাকলিয়া থানাধীন ল্যান্ডমার্ক আবাসিক এলাকার লায়লা ভবনে। সে মেরন সান স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা মোহাম্মদ নাছির সৌদি আবর প্রবাসী।
বুধবার সকালে গলা কাটা অবস্থায় ইনহাসকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই বাকলিয়া থানা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই ও নগর গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের একাধিক সংস্থার ঘটনার ‘ক্লু’ উম্মোচনে কাজ করছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘খুনের রহস্য উম্মোচনে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। পারিবারিক, দ্বন্দ্ব এবং কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে এ ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে এটি ডাকাতির ঘটনা বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও ডাকাতির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। পরিবারের কয়েকজনের আচরণ রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। নিহত ওই ছাত্রীর মাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’
নিহত স্কুলছাত্রীর মা নাসরিন আকতার খুশবু বলেন, তার তিন মেয়ের মধ্যে নিহত ইনহাস সবার বড়। বুধবার সকালে মেঝো মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যান। তখন ইনহাসের সাথে তার ছোট বোন ছিল। সকাল নয়টায় বাসায় ফিরে দেখতে পান বালিশ চাপা অবস্থায় ইনহাস পড়ে আছে। ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে বালিশ সরালে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পায়। পরে চিৎকার শুনে সবাই ছুঁটে এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
নিহত ইনহাসের চাচী জেবুন্নেছা বলেন, ‘খুশবু মেয়ের অবস্থা দেখে আহাজারি করতে করতে এক পর্যায়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এসময় নিজের হাত কেটে পেলে। সবার বাঁধার মুখে আত্মহত্যা করতে পারেনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘ইনহাসকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর থেকে তার মা রহস্যজনক আচরণ করছে। তার মৃত্যু নিয়ে পরিবার থেকেই বিভিন্ন ধরণের কথা উঠে আসছে।’
ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়- এলোমেলো অবস্থায় পড়া ছিল কাপড়চোপড়। তবে শোবার ঘরের ওয়ারড্রব অক্ষত ছিল। পরিবারের দাবি, ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতি করতে এসে ইনহাসকে খুন করে মালামাল নিয়ে যায়। আলমারি থেকে তাদের বেশ কিছু গয়না খোয়া গেছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) আবদুর রউফ বলেন, ওই বাসার আলমারির কাপড় তছনছ করা হলেও বেশকিছু ইমিটেশনের গয়নায় হাত দেওয়া হয়নি। আলমারি ভাঙার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। আলমারির চাবি ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখছি। সব দিক মাথায় রেখেই পুলিশ তদন্ত করছে।’
জানা যায়- তিন কক্ষের বাসায় মেয়েদের ও শাশুড়িকে নিয়ে তিনি থাকতেন। ঈদে তার শাশুড়ি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। ছয় তলা লায়লা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় নাছির ও তার তিন ভাইয়ের পরিবার থাকে। পঞ্চম তলায় থাকেন নাছিরের পরিবার। নিচ থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেয়া। নাছিরের মত তার তিনভাইও সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের আরেক ভাই পরিবার নিয়ে সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর ঢেমশা গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে থাকেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন