চট্টগ্রাম মহানগরের অন্যতম বৃহত্তম এলাকা হালিশহরে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া পানিবাহিত জন্ডিস (হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস) নিয়ে সিভিল সার্জন ও ওয়াসা বিপরীত মুখি অবস্থান নিয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, ‘ওয়াসার পানিতে সমস্যা আছে। তাই জন্ডিসে আক্রান্তের হার বাড়ছে।’ পক্ষান্তরে ওয়াসা বলছে, ‘তাদের পানিতে কোনো জীবাণু নেই। জলাবদ্ধতা ও পানির ট্যাংক অপরিস্কারের কারণে এমনটি হয়েছে।’
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সংস্থা বিপরীত মুখি অবস্থানের মধ্যেও হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর তথ্য চাওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ২১৮ জন জন্ডিস আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত পূর্বের ১৭৮ জনসহ মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯৬ জন।
সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে সমস্যা আছে। সমস্যা না থাকলে ওই এলাকার মানুষ কেন জন্ডিস (হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস) ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা ছাড়া এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। তাই আমরা মনে করি, গণমাধ্যমের কাছে পানিতে জীবাণু নেই দাবি না করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকা এবং কোথায় লিক আছে তা বের করে প্রকৃত চিত্র দেখা উচিত ওয়াসার।’ তিনি বলেন, ‘হালিশহর এলাকায় দ্রæতই পানির সমস্যা সমাধান করা উচিত। প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করে হলেও ভ্রাম্যমাণ দোকান বন্ধ, পানির ট্যাংক পরিস্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় এ সমস্যা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ল্যাবেরেটরি রিপোর্টে দেখা যায়, হালিশহরের পাঁচটি স্থান থেকে সংগ্রহ করা পাঁচটি পানির স্যাম্পলের কোনটিতেই ক্ষতিকর এবং পানিবাহিত রোগের জন্য দায়ি মোট কোলিফর্ম বাসিলি এবং মোট ফেসাল টাইপ কোলিফর্ম পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র একটি স্যাম্পলে অ্যারোবিক প্লট কাউন্ট (এপিসি) মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি কিংবা হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের জন্য দায়ি নয়। তাই ওয়াসার পানি ক্ষতিকর তা বলা যাবে না।’
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ওয়াসার অভিযোগ, হালিশহর এলাকায় যত্রতত্র খোলা খাবার বিক্রি হয়, এসব খায় স্থানীয়রা। এর সঙ্গে আছে বছরের পর বছর ধরে পানির ট্যাংক পরিস্কার না করা। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় অধিকাংশ এলাকা। এ সময় টয়লেট আর খাবার পানি একাকার হয়ে যায়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হলেও এ সব বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে সংস্থা দুটি মনে করছে।
এর আগে গত মার্চে ওয়াসার পানিতে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে পানিবাহিত রোগে শতাধিক আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে ঢাকার রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ওই এলাকার পানি টেস্ট করে ৩১ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হয় বলে শনাক্ত করে। কিন্তু তখনও চট্টগ্রাম ওয়াসা তাদের পানিতে কোনো ধরনের জীবাণু নেই দাবি করেছিল।
প্রসঙ্গত, নগরের হালিশহরে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এইচ বøকের বাসিন্দা শাহেদা মিলি (৪০), বি ব্লকের বাসিন্দা ও কমার্স কলেজের ছাত্র আশিফুল হাসান রিয়াদ এবং বি ব্লকের বাসিন্দা মাকসুদুর রহমান মারা যান বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
জানা যায়, পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় জরুরি ভিত্তিতে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে। তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নির্দেশনা সম্বলিত ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণ এবং পানি বিশুদ্ধকরণে এক লাখ ৮৫ হাজার টেবলেটও বিতরণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার