চট্টগ্রামের সাংবাদিক কন্যা রাফিদা খান রাইফা ‘হত্যা’র ঘটনায় ম্যাক্স হাসপাতালে গাফেলতি ও চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিইউজের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস।
সিইউজে সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামলের সঞ্চালনায় এ সময় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজের সাবেক সভাপতি এজাজ ইউসুফী, মোস্তাক আহমদ, রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি মনজুর কাদের মনজু, সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী প্রমুখ।
শুক্রবার প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ঐ সময় থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই ছিল না। শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফাকে অসুস্থতার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের ভোগান্তি চরমে ছিল। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
ম্যাক্স হাসপাতালে গাফেলতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়- হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি প্রকট। চিকিৎসক নার্সদের সেবা প্রদানের সমন্বয়হীনতা ও চিকিৎসাকালীন মনিটরিংয়ের অভাব দেখা যায়। অদক্ষ নার্স ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ফলে কাঙ্খিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল রয়েছে, বিশেষত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞের সার্বক্ষণিক উপস্থিতির সংকটটি প্রবল।’
প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয়। তা হলো - ‘চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ম্যাক্স হাসপাতালের সার্বিক ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অতিদ্রুত সংশোধন করা অপরিহার্য। কর্তব্যরত নার্সগণ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিপ্লোমাধারী থাকার নিয়ম থাকলেও উক্ত হাসপাতালে তা নেই। ডিপ্লোমা নার্স দ্বারা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক দ্রুত ও আন্তরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং রোগীরঅভিভাবককে যথাসময়ে রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসর ব্যাপারে সর্বশেষ পরিস্থিতি অবগত করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুন গলার ব্যথা নিয়ে সাংবাদিক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পর ভুল চিকিৎসায় রাইফার মৃত্যুর অভিযোগে মাঠে নামে সাংবাদিক সমাজসহ সাধারণ জনতা। এরপর থেকেই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি করে আসছেন তারা।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন