চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়ায় ব্যাক্তি উদ্যোগে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সী-বিচে আবারও তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বীচ নামের মৃত্যুকুপটিতে গোসল করতে গিয়ে তারা নিখোঁজ হন। নিখোঁজ তিন তরুণ হলেন- সাইদুল (২৪) আলা উদ্দিন (২২) ও ইয়াছিন (১৮)। তারা সবাই চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানার ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা।
এর মধ্যে ইয়াসিন একটি প্রেসে এবং সাইদুল ও আলাউদ্দীন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করেন। কয়েকটি পরিবারের ২২ সদস্য মিলে দুপুরে তারা বাঁশবাড়িয়া বীচে বেড়াতে যায়। এর মধ্যে তিনজন নিখোঁজ হয় বলে জানা যায়। রাত আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে বিকাল থেকে জোয়ার শুরু হওয়ায় কারণে তল্লাশি বন্ধ থাকে। রাত ১১টার দিকে ভাটা হলে ফের ডুবুরিদল অভিযানের নামার কথা ছিল বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘সাগরে গোসল করতে গিয়ে তিনজন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল তল্লাশি চালাচ্ছে।’
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ ওয়াসি আজাদ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় সাগরে তিন পর্যটক নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে এখনো কোনো খবর পাইনি।’
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম বলেন, ‘গোসল করতে নেমে আবারও তিন তরুণ নিখোঁজ হয়েছে। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন জনৈক এমএ কাসেম রাজা নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর উদ্যোগে গড়ে উঠা অবৈধ পর্যটন কেন্দ্র ঘেঁষা সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন নারায়ণগঞ্জের রাজ এবং ইমন নামের শিক্ষার্থী। পরদিন ২২ জুন বিকেলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ করে সেখানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনকে। তবে জেলা প্রশাসকের এ নির্দেশনা মানা হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ফলে অকালে দুইটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার দাঘ না শুকাতেই আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বীচটি ক্রমেই মৃত্যুকুপে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে, গত ২১ জুনের ঘটনায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বাঁশবাড়িয়া বীচ বন্ধে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন উপজেলা প্রশাসনকে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাহারা এবং মাইকিং এর ব্যবস্থা করলেও পর্যটক প্রবেশ করতে না পারার মত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে আমরা গ্রাম্য পুলিশের ব্যবস্থা, সতর্কতা সাইনবোর্ড ও মাইকিংসহ পর্যটক প্রবেশ না করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু বীচটি বড় পরিসরের এবং সবদিকে খোলা। তাছাড়া গতকাল শুক্রবার থাকায় দায়িত্বরত গ্রাম্য পুলিশ দুপুরে খাইতে যাওয়ার সময়ে হয়তো এ ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, পর্যটক প্রবেশ না করতে নিরাপত্তা বেষ্টনীয় জন্য কোনো বরাদ্দ আমরা জেলা প্রশাসন থেকে পাইনি। তাই এ ব্যাপারে কিছু করতে পারি নাই।’
সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) কামরুজ্জামান বলেন, ‘২১ জুনের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে বাশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছিল, বীচটিতে প্রয়োজনীয় তদারকি করতে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন না করে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। তাই এ ঘটনা ঘটেছে।’
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন