দেশে চারবার কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হলেও কখনো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হতো না। তবে পঞ্চম কৃষি শুমারিতে প্রথমবারের মত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের তথ্য সংগ্রহসহ কৃষি শুমারির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জিডিপিতে বর্তমানে বৃহত্তর কৃষির সমন্বিত অবদান শতকরা ১৪ দশমিক ১০ ভাগ এবং মোট শ্রম শক্তির শতকরা ৪০ দশমিক ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। কৃষির এই গুরুত্ব বিবেচনায় পঞ্চমবারের মত ‘কৃষি শুমারি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) ২০১৮’ করা হবে। এর আগে বিবিএস বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহযোগিতায় ১৯৭৭, ১৯৮৩-৮৪, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে কৃষি শুমারি পরিচালিত হয়। আগামী মাস থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। ইতোমধ্যে জোনাল অপারেশনের জন্য ৯৪ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়হিদুর রহমান বলেন, ‘প্রথমবারের মত কৃষি শুমারিতে শস্যের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুমারিতে কৃষি বিভাগের তথ্যের মধ্যে থাকবে-
কৃষকের জমির পারিমাণ, জমি কিভাবে ব্যবহার করে, কৃষকের নিজস্ব এবং বর্গা জমির পরিমাণ, জমি থেকে কৃষকের আয়, কৃষি জমি থেকে অন্যান্য আয়, প্রতি বছর কৃষি জমি কী পরিমাণ কমছে, পানি-সেচ-রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত জমির পরিমাণ, ক্ষতির পরিমাণ, ঋণের উৎস ও ব্যবহার, কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা। মৎস্য বিষয়ক তথ্যের মধ্যে আছে, মোট মৎস্য উৎপাদন, দেশীয় ও ফার্মের মৎস্য উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদনে সমস্যা ইত্যাদি। প্রাণিসম্পদ তথ্যের আছে, কী কী প্রাণী লালন করে, মোট আয় কত, প্রাণীর থেকে উপখাত (যেমন- পশুর চামড়া) কি পারিমাণ পাওয়া যায, এ খাতের সমস্যা নির্ধারণ। শুমারির মাধ্যমে দেশের সকল কৃষি খানার তালিকা তৈরি করা হবে। এ সব তথ্য সরকারের পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজতর হবে।’
জানা যায়, গ্রামীণ দারিদ্রতা দূরকরণ এবং কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষিশুমারি পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির ব্যবহার, কৃষির প্রকার, শস্যের ধরণ, চাষ পদ্ধতি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর সংখ্যা এবং কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে। এ সব তথ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা, পরিসংখ্যান উন্নয়নে জাতীয় কৌশলপত্র, পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণে সহায়তা করবে বলে জানা যায়।
জানা যায়, এই শুমারির মাধ্যমে জনগণও নানা সুফল ভোগ করতে পারবে। এর মধ্যে আছে, প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নেবে।
তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভর্তুকী নেয়া, শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও আনুষঙ্গিক প্রণোদনা নেয়া, কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, পতিত জমির হিসাব জেনে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ, কৃষক ও জেলেদের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে জেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার