চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়ের (চসিক) আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সিটি কর্পোরেশনকে একটি জবাবদিহিতামূলক সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছি। কারণ স্বচ্ছতা এবং সততাই আমার সম্বল। গত তিন বছরে আমার কোনো ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের কথা কেউ বলতে পারবেন না। এটাকেই আমার সফলতা হিসাবে মনে করি। কাজের মাধ্যমেই আমি নিজের যোগ্যতা, সততা এবং সফলতার প্রমাণ দেব।’
চসিক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আজ সোমবার দুপুরে নগরের একটি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মেয়র এবং কাউন্সিলরদের মাধ্যমে গত এক বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়।
সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ হারুন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন ও মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা।
চসিক মেয়র বলেন, নগরে সুপেয় পানি, নিরাপদ পানি দিতে গেলে প্রকল্প গ্রহণের তো বিকল্প নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তা কাটাকাটি করতে হয়। তাছাড়া উন্নয়নকাজগুলো এমন নয় যে, একদিনেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। একেকটা প্রকল্পের মেয়াদকাল তিন-চার বছর। এটাই বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘কেজিডিসিএল, টিঅ্যান্ডটি, ওয়াসা সবার উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। সবাই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। যখন প্রকল্পের কাজ চলে, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলে তখন আমাদেরও অনেক কষ্ট হয়। বুকটা ছিঁড়ে যায়। রাস্তাটা অনেক কষ্ট করে তৈরি করা রাস্তা যখন কেটে ফেলা হয়, তখন আমাদের খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু এর বিকল্প তো নেই। আপনাদের কারো কাছে যদি কোন বিকল্প পথ জানা থাকে, তাহলে আমাদের বলুন। আমরা সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। আমাদের অজ্ঞতা আছে। আপনাদের জানা থাকলে আপনারা বলুন। তবে যা কিছু হচ্ছে, এই নগরবাসীর কল্যাণের জন্যই। দিনশেষে এর সুফল নগরবাসীই পাবে।’
সিটি মেয়র বলেন, ‘নগরের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে ভোগান্তি নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে আমি মনে করি, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বারবার প্রচার না করে সমাধানের জন্য এর বিকল্প পথ আছে কি না সেটা তুলে ধরলে ভাল হয়। এতে আমরা যারা প্রকল্প গ্রহণ করছি, তারা উপকৃত হব, সঙ্গে নগরবাসীও উপকৃত হবেন। কিন্তু সেটা তুলে না ধরে যদি বারবার সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়, তাহলে নগরবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রাম। অথচ এখানে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এজন্য আমাদের নদীগুলো দূষিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছি। এখন পয়:নিষ্কাশন প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে আবারও তো রাস্তা কাটাকাটি করতে হবে। এখন যেভাবে রাস্তা কাটা হচ্ছে, তার চেয়ে আরও বিশাল বিশাল গর্ত করতে হবে। তখন পত্রিকায় আবার লেখা হবে রাস্তা কাটা হচ্ছে, ভোগান্তি হচ্ছে। তাহলে কি ওয়াসা এই প্রকল্প গ্রহণ করবে না? তবে বাস্তবতা হলো- যে কোন উন্নয়নে ভোগান্তি আছে। এই ভোগান্তি আমাদের সহ্য করতে হবে। ভোগান্তি সহ্য করার মতো ধৈর্য ধারণ করতে হবে।’
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘সমালোচনা আপনারা করুন। সমালোচনা করার অধিকার আপনাদের আছে। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে ঘায়েল করার বিকৃত মানসিকতা নিয়ে সমালোচনা করবেন না। না জেনে, না বুঝে সমালোচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপনি যে রাস্তা দিয়ে চলেন, আমিও একই রাস্তা দিয়ে যাই। সুতরাং সমালোচনা যৌক্তিক হতে হবে, তাহলে সেটা আমরা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করব।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার