চট্টগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে নৌকার টিকেট না পেয়েও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ‘চমক’ দেখিয়েছেন দুই বিদ্রোহী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। এদের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফটিকছড়ির আবু তৈয়ব এবং অপর বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগে যোগদান করা এলডিপি নেতা ও লোহাগাড়ার বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল।
বিজয়ী দুই উপজেলা প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন নৌকার মনোনীত শক্ত দুই প্রার্থী। শক্ত এ দুই প্রার্থীকে বিদ্রোহীরা পরাজিত করেছেন দেশের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ২য় ও ৪য় ধাপে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও লোহাগাড়ায় উপজেলা নির্বাচনে।
তবে নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের নেপথ্যের কারণ হিসেবে অভিযোগ উঠেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ শীর্ষ নেতাসহ নেতা-কর্মীদের কৌশলী ভূমিকাসহ নানা প্রশ্ন। অন্যদিকে দুই উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তীতে নৌকার পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে ভোটে অনিয়ম, জালভোটসহ নানা প্রশ্ন তুললেও বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন। বরং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকরা গ্রেফতার, মামলা-হামলাসহ নানাবিধ হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও জানান তারা।
লোহাগাড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল ক্ষোভের সাথে বলেন, নির্বাচন চলাকালে আমার প্রচুর ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দেয়নি নৌকার সমর্থকরা। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে এজেন্টও দিতে দেয়নি। রাস্তায় অনেক ভোটারকে মারধর করেছে। অনেকের পাও ভেঙে দিয়েছে। নৌকার পক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল জামায়তের অনেক লোকজন। এতো কিছুর পরও লোহাগাড়ার সাধারণ ভোটাররা আমাকে যোগ্য মনে করে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তবে উপজেলার ভোটার ও সাধারণ মানুষের সেই সম্মানটুকু দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে একই কথা বললেন ফটিকছড়ির বিদ্রোহী প্রার্থী আবু তৈয়বও। তিনি বলেন, আামর অনেক নেতা-কর্মীকে ভোটের সময় বাধা দেয়া, হুমকিসহ নানাভাবে ভয়-ভীতিও দেখানো হয়েছিল। তবে শত বাধার মধ্যেও ভোটাররা ভোট দিতে এসেছেন। তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। জীবনের বাকি সময়টুকু ফটিকছড়িবাসির সুখ-দুঃখের সাথে থাকতে চাই বললেন তিনি।
নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩১ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী লোহাগাড়ার বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল (আনারস)। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩’শ ৩৭ ভোট এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৫’শ ৬০ ভোট।
জিয়াউল হক বাবুল রাজনীতির শুরু করেছেন জাতীয় পার্টি দিয়ে। এরপর বিএনপি হয়ে কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির রাজনীতি করেন। ছিলেন উপজেলা এলডিপির সভাপতিও। বাবুল ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন।
অন্যদিকে ২য়ধাপের নির্বাচনে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এইচএম আবু তৈয়ব চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৫ হাজার ১৬১ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরীকে পরাজিত করেছেন। এতে আনারস প্রতীক নিয়ে এইচএম আবু তৈয়ব ৫৭ হাজার ৬০২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাজিম উদ্দীন মুহুরী নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ৪২ হাজার ৪৪১ ভোট।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন