শিরোনাম
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২১:৪১

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করেই কোটিপতি জয়নাল

বাঁশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে কোটি টাকার বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করেই কোটিপতি জয়নাল

২০০৪ সালে ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পান বাঁশখালীর জয়নাল আবেদীন (৩৫)। তার মতে, ২০১৪ সাল থেকে জনপ্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অবৈধ উপায়ে সরবরাহ শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকলেও মধ্যস্থতা করতেন জয়নাল আবেদীন। আর এ কাজের জন্য তিনিও মোটা অংকের টাকার ভাগ পেতেন। 

এ পর্যন্ত অন্তত ১৮০০ রোহিঙ্গা নাগরিকের ভুয়া পরিচয়পত্র সরবরাহ করে তিনি অবৈধভাবে কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জয়নাল তার গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীর পৌর সদরের আশকরিয়া পাড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করছেন পাঁচতলা একটি ভবন। এর বাইরে নগরীতে ফ্ল্যাট ও বাঁশখালীতে রয়েছে নামে-বেনামে কয়েক কানি সম্পত্তি।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, আদালতে জয়নাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজের দোষ স্বীকারের পাশাপাশি তাকে যারা সহযোগিতা করত, তাদের নামও প্রকাশ করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা কারো নাম প্রকাশ করছি না আপাতত। যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।  

এ পর্যন্ত ১৮০০ ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জয়নাল তার জবানবন্দিতে রোহিঙ্গা ভোটার বানানোর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলার নির্বাচন অফিসের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামও প্রকাশ করেছেন। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ১৫ জনের নামের একটি তালিকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কার্যালয়ের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা, স্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী ও সাবেক কর্মরত ককেয়কজন কর্মীর নামও আছে। ইতোমধ্যে জয়নালসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্যরা থানা পর্যায়ের কর্মকর্তার নিচের র‌্যাংকের বলে জানা গেছে। যারা গ্রেফতার হয়নি তাদেও মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমের নজরদারিতে রয়েছে।

এর আগে গ্রেফতারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ২ দিনের জন্য কোতোয়ালী থানার দেওয়ান বাজার সাব-এরিয়া এলাকার আমেনা মঞ্জিলের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটেই রীতিমতো অফিসকে নিয়ে আসতেন। সেই ফ্ল্যাটে নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাডও আনতেন। সপ্তাহের সরকারি বন্ধের ২ দিন শুক্রবার ও শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে নিজ ফ্ল্যাটে বসে জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় প্রাথমিক কার্যক্রম (ডাটা ক্রিয়েট) সম্পন্ন করতেন চক্রটি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঢাকাসহ বিভিন্ন অফিসে জয়নালের অন্তত ১০ জন আত্মীয়-স্বজন বর্তমানে চাকরি করছে। এদের অনেকেরই নিয়োগ হয়েছে জয়নালের তদবিরের কারণে। শনিবার সন্ধ্যায় মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো. নোমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জয়নাল এমনই তথ্য দেন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার নির্বাচন কমিশনের ৪ কর্মীর মধ্যে বাঁশখালীর জয়নাল আবেদীনের চাকরিই স্থায়ী। রোহিঙ্গাসহ সাধারণ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ভুল সংশোধন এবং হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্র পেতে নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে সহযোগিতা করতেন। এসব কর্মকর্তার অনেকে এখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বদলি হয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে নির্বাচন কমিশন তাদের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ১৭ সেপ্টেম্বর এদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় আদালতের আদেশে জয়নাল ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতে থাকার পর শনিবার স্বীকারোক্তি দেন। জয়নালসহ চারজনকে আরো জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য কাউন্টার টেররিজমের হেফাজতে নেওয়া হয়। 

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

সর্বশেষ খবর