কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পরই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন চট্টগ্রাম তিন সাংগঠনিক কমিটির যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিকলীগ ও কৃষক লীগের সম্মেলন ঘিরে চলছে নানান আলোচনা। তিন সাংগঠনিক কমিটির সম্মেলন নিয়ে এখনও দিন-তারিখ ঠিক না হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে চলছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা বৈঠকও।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনাও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদপ্রত্যাশীরাও শীর্ষ নেতাদের চোখে পড়তে নানান ধরণের কর্মসূচীতেও অংশগ্রহণ করছেন। তিন সাংগঠনিক কমিটির নেতৃত্বে কারা আসছেন, সেটি জানা না গেলেও যোগ্য, সাংগঠনিক দক্ষতা ও ত্যাগী নেতাদের দিয়েই কমিটি হবে সেই প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাদের। ইতিমধ্যে স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে কেন্দ্রীয় চিঠি না আসলেও সংগঠন গোচাতে তৎপর নগর ও জেলার নেতারা। তবে মহানগর ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগের সম্মেলন হয়েছে বলে দলীয় সুত্রে জানা গেছে।
ক্যাসিনো কান্ডে আলোচিত যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সবগুলো সংগঠনের সম্মেলনই হবে নভেম্বরে, যা শুরু হবে ২ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এরপর ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন হবে। গত বুধবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেন। প্রতিটি সংগঠনের নেতাদের চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, ২ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পরের দিন ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা দিবস থাকায় কৃষক লীগের সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগের সম্মেলন হয়েছে ২০১৭ সালে। বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের সুন্দরভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সংগঠনের সকল কর্মকান্ড সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করতে এবং তৃণমূলকে আরো সংগঠিত করতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। তবে উত্তর জেলা কৃষক লীগের সম্মেলন হলেও মহানগরে এখনও পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলেই হয়তো সম্মেলন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই কমিটি নেই স্বেচ্ছাসেবকলীগ চট্টগ্রাম নগরের (উত্তর ও দক্ষিণ) পৃথক সাংগঠনিক কমিটির। একটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটি না থাকায় নেতৃত্ব শূন্যতায় ভূগছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। দক্ষিণ জেলার কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি দীর্ঘ দেড় বছরেও। কমিটি না হওয়ায় হতাশায় দিন গুণছেন তৃণমূলের নেতারা।
দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাতকানিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং নগর ও উত্তরে দ্রুত সময়ে সম্মেলন হবে বলে আশা করছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিনহাজুল আবেদীন সায়েম ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আহবায়ক কমিটি গঠনের পর কিছুটা তৎপরতা থাকলেও বর্তমানে নেই বললেই চলে। শুরুতেই ব্যাপক কর্মকান্ডের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় থাকে এ কমিটি। তিনি বলেন, নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে এবার সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে ত্যাগী, যোগ্য নেতারা সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে বলে জানান তিনি।
শীঘ্রই হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতি। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করতে ইতিমধ্যে তালিকা তৈরি করতে জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নির্দেশনাও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কাউন্সিলরদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। জেলাসহ উপজেলা পর্যায়ে এ তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জেলার কমিটির নেতাদের সাথে দফায় দফায় এ বিষয়ে আলোচনা ও বৈঠক হচ্ছে। তবে সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশে সম্মেলন শেষ করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার