চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাবরেটরিতে গত ৮ এপ্রিল করোনাভাইরাস সন্দেহে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১৩০টি, এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় ১০৪টি। এরপর গত ৯ এপ্রিল পূর্বের ২৬ এবং ওই দিনের ১০০ সহ ১২৬টি নমুনা হলেও ৭৩টি পরীক্ষা করা হয়। ১১ এপ্রিল প্রায় একশত নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয় ৭৯টি।
বিআইটিআইডি ল্যাবে প্রতিদিন রুটিন করে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহের হার বাড়ছে। কিন্তু সংগ্রহ করা নমুনাগুলো নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ল্যাবরেটরির সক্ষমতার চেয়ে নমুনা বেশি হওয়ায় পরীক্ষায় বিলম্ব হচ্ছে। ফলে নমুনা পরীক্ষায় সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া, করোনাভাইরাসের নানা উপসর্গ নিয়ে বিআইটিআইডিতে গেলেও অনেককে ভোগান্তর শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন মৃত্যু ও ১০ জন চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষায় ল্যাব আছে মাত্র একটি। ল্যাব একটি হওয়াতে নমুনা পরীক্ষায় হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এ ল্যাবের উপকরণ, অবকাঠামো এবং জনবল দিয়ে দৈনিক ৪০টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব। বর্তমানে সক্ষমতার চেয়ে বেশি পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষও মনে করছে, নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। তবে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসন ল্যাব বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পিসিআর (পলিমারি চেইন রিঅ্যাকশন) মেশিন আসার কথা। তাছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবেও নমুনা পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত স্বাচিপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে একটি ল্যাবেই নমুনা পরীক্ষা চলছে। এটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে নমুনা পরীক্ষায় সংকট দেখা দিচ্ছে। চট্টগ্রামে অন্তত আরো তিনটি ল্যাবকে প্রস্তুত করা দরকার। তবে নতুন ল্যাব তৈরিতে প্রস্তুতি চলছে।’
বিআইটিআইডির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘করোনার বর্তমান প্রাদুর্ভাব কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে। এমন সময়ে টেস্ট আরো বেশি সংখ্যক করা প্রয়োজন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারিত মানদণ্ড মেনে এবং যাচাইয়ের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে সীমিত জনবলসহ নানা কারণে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এটাও ঠিক, বর্তমানে সক্ষমতার চেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই টেস্টের পরিমাণ বাড়াতে আরও ল্যাবের কথা চিন্তা করতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই চমেক হাসপাতালের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি ল্যাবেও টেস্ট শুরু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে আগে চমেক হাসপাতালে শুরু হবে।’
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যে চমেক হাসপাতালে পিসিআর মেশিন আসার কথা। মেশিন আসার পর স্থাপনসহ সামগ্রিক কাজ করতে দুই দিন সময় লাগবে। এর টেস্ট শুরু করা যাবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ