২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১০:২০

কে হচ্ছেন আল্লামা শফীর উত্তরসূরি

তিন সদস্যের কমিটি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও মুহাম্মদ সেলিম

কে হচ্ছেন আল্লামা শফীর উত্তরসূরি

দেশের শীর্ষ আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে কওমি মতাদর্শীদের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা শেখ আহমদ ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ তিনজন দৌড়ে থাকলেও নতুন করে রেসে চলে আসতে পারে অন্য কেউ। তবে গঠনতন্ত্র ও নানান হিসেবে যিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হবেন তিনিই হবেন আল্লামা শফী পরবর্তী কওমি কাণ্ডারি। সবমিলিয়ে সবার কাছে এখন প্রশ্ন কে হচ্ছেন আল্লামা শফীর উত্তরসূরি।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী জানান, হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী আমির কে হবেন তা নির্ধারণ করা হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে। আমার দায়িত্ব হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল ডাকা। কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেবে ওটাই হবে। এদিকে গতকাল রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা পরিচালনা করতে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেফাকের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক জানান, হুজুরের (আল্লামা আহমদ শফী) জায়গা পূরণ হওয়ার নয়। তারপরও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাঁর সব শূন্য পদ পূরণ করা হবে।

দেশের কওমি অঙ্গনের প্রবীণ আলেম ও কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকের সভাপতি ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মৃত্যুর আগের দিন উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ তিন যুগ পর চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এ ছাড়া কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট উচ্চতর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ‘আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল- জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন আল্লামা শফী। শীর্ষ এই আলেমের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা শুরু হয়েছিল। শুক্রবার তার মৃত্যুর পর এটি আরও জোরদার হয়েছে। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না বলে মনে করছেন কওমি আলেমরা।

এ ছাড়া কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্বে থাকার কারণেই অরাজনৈতিক সংগঠন-হেফাজতে ইসলামের আমির হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন আল্লামা শফী। তার অনুপস্থিতিতে এ সংগঠনের নেতৃত্বে কে আসবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে আল্লামা শফী অসুস্থ থাকায় তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। এ সুযোগে তার ছেলে আনাস মাদানী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান। এ নিয়ে কওমি অঙ্গনে বেশ চাপা অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তাছাড়া আল্লামা শফীর উত্তরসূরি ঠিক করা নিয়েও ভিতরে ভিতরে তৎপরতা চলছিল। তার ছেলে আনাস মাদানীকেও হাটহাজারীর ওই মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়। কওমি মতাদর্শী একাধিক নেতা বলেন, যিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক হবেন, তিনিই হবেন আল্লামা শফী পরবর্তী শীর্ষ কওমি আলেম। কওমি সমাজে হাটহাজারী মাদ্রাসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে আল্লামা আহমদ শফী আড়াই শতাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার দায়িত্ব পালন করতেন। তাই হাটহাজারী মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর স্থলাভিষিক্ত হবেন। এই মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে বর্তমান সহযোগী পরিচালক আল্লামা শেখ আহমদ। কিছু দিন আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটি সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে অব্যাহতি দিয়ে এই পদে নির্বাচিত করেন শেখ আহমদকে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, আল্লামা শফীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আল্লামা শেখ আহমদ। তবে শূরা কমিটি চাইলেই নতুন কাউকে মহাপরিচালক নির্বাচিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে দৌড়ে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আহমেদ দিদার কাসেমী। মাদ্রাসার একাধিক সূত্র জানান, হাটহাজারী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিশে শূরা কমিটির ১৭ সদস্যের মধ্যে এরই মধ্যে আল্লামা আহমদ শফীসহ সাতজন মারা গেছেন। জীবিত শূরা সদস্যরা শিগগির এ বিষয়ে বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বর্তমান সহযোগী পরিচালক শেখ আহমদকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হবে নাকি তার স্থলে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

মাদ্রাসা পরিচালনায় কমিটি গঠন : হাটহাজারী মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা পরিচালনা করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরা হলেন- সহযোগী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ, মুফতি আবদুস সালাম এবং মাওলানা ইয়াহিয়া। মাদ্রাসার নতুন শিক্ষা সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে। মৃত শূরা সদস্যদের স্থলে নতুন করে যুক্ত হওয়া সদস্যরা হলেন- মাওলানা আবদুল মালেক, মাওলানা ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা আহমদ শফী এবং মাওলানা হাফেজ সায়েদ হোসেন। ছাত্র আন্দোলনের ঘটনা তদন্ত করতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। গতকাল রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মজলিশে শূরা কমিটি এসব সিদ্ধান্ত নেন। মাদ্রাসার শূরা সদস্য মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন, শূরা কমিটিতে নতুন করে পাঁচজন নিয়োগ এবং তদন্ত কমিটি গঠনসহ নানা বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বাবুনগরীকে শাইখুল হাদিসের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর