মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে অমলিন রাখতে চট্টগ্রামে ৩২ বছর আগে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে কোনো ছন্দপতন ঘটেনি মেলার। বরং বিজয় মেলার আবহ-আমেজ চট্টগ্রাম থেকে বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে দেশজুড়ে।
সময় পরিক্রমায় বিজয় মেলা এখন মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় স্মারক পরিগ্রহ করেছে। কিন্তু সেই বিজয় মেলা উদযাপনে এবার বাধ সাধল বৈশ্বিক মহামারি করোনা। কেবল করোনার কারণে ৩২ বছরের বিজয় মেলায় এবার ছন্দপতন ঘটছে। প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মেলা উদযাপন খুবই সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় যাত্রা করে বিজয় মেলা। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা বীর বাঙালির অহংকার’ শীর্ষক শ্লোগানে শুরু হওয়া এই মেলা গত ৩১ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
তবে এবার প্রথমবারের মত করোনার কারণে বৃহৎ পরিসরে কোনো আয়োজন থাকছে না। কেবল সংক্ষিপ্ত আয়োজনে মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দুইদিনের আলোচনা। প্রতিষ্ঠাকালে যৌথভাবে যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও ফারুকে আজম বীর প্রতীক এবং সদস্য সচিব সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, ‘জাতীয়ভাবেই বিজয় দিবসের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। ফলে ৩২ বছরের বিজয় মেলাও সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এবার পণ্য মেলাসহ ব্যাপক পরিসরের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। তবে ধারাবাহিকতা রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দুইদিন সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ ডিসেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণ সভা ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান।’
পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল বলেন, ‘করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত আয়োজনে শিখা প্রজ্বলন ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে দুইদিন ব্যাপী আলোচনা সভা ছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। তবে আলোচনা সভা অনলাইনের মাধ্যমে লাইভে প্রচার করা হবে।’
জানা যায়, প্রতিবছর জিমনেশিয়াম ও আউটার স্টেডিয়ামে ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর মাসব্যাপী চলত বিজয় মেলা। জিমনেশিয়ামে মেলার মূল মঞ্চে থাকত বরেণ্য জাতীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ-উপস্থিতিতে বিষয় ও দিবস ভিত্তিক আলোচনা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিখা প্রজ্বলন, র্যালি, নৃত্যসহ নানা আয়োজন। আউটার স্টেডিয়ামে বসত নানা রঙের-রকমের পণ্যের মেলা। মেলায় সারাদেশ থেকে নানা পণ্যের বিক্রেতারা পসরা সাজাত।
তাছাড়া এ সংগঠনের উদ্যোগে লালদীঘি মাঠে আয়োজন করা হত ফুটবল টুর্নামেন্ট ও কর্ণফুলী নদীতে সাম্পান বাইচ। ফলে এটি চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির অনন্য স্মারক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর