চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেত্রী ডা. লুসি খানের আনা মামলা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে মুখ খুলেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। এন্তার অভিযোগ এনেছেন লুসির বিরুদ্ধে।
মেয়র নির্বাচনে সৃষ্ট ইমেজ ধ্বংস করার জন্যই শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন লুসি খান- এমনটিই দাবি বিএনপির।
চাঁদাবাজির মামলায় শাহাদাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে অভিযোগ আনা 'হাস্যকর, মিথ্যা, কুরুচিপূর্ণ, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়' বলে উলেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপি নেতা শাহাদাত রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের স্বীকার। কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই মামলা দায়ের হওয়ার সাথে সাথে গ্রেফতার করাও রহস্যজনক।
বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ।
ডা. শাহাদাতের আইনজীবী এডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করে ডা. লুসি খান মামলা দায়ের করেছেন। মুজাফফর আহমেদ এবং তিন নম্বর আসামি ফাতেমা জহুরা, যিনি মুজাফফরের স্ত্রী। বলা হয়েছে, শাহাদাত হোসেনের নির্দেশে জনৈক ডা. লুসি খানের সচিবকে অপহরণ করা হয়েছে এবং চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
বাদী লুসি খান বলছেন, গত ২০ মার্চ উনার এনজিওর অফিসে গিয়ে উনার সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এবং চাঁদা দাবি করা হয়েছে। মুজাফফর আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ২০ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। তার স্ত্রী ২০২০ সালে করোনা শুরুর আগে বাংলাদেশে আসেন এবং ১১ মার্চ ২০২১ সাল থেকে মুজাফ্ফর আহমদ সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। চাঁদা দাবি এবং অপহরণের কথা বলা হচ্ছে, যে লোক বাংলাদেশে নেই তার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক হয়রানি এবং একজন শিক্ষিত লোকের চরিত্রহনন বিরোধী দল করলে বাংলাদেশে এখন কতটা সহজ হয়ে গেছে, সেটাই এ মামলায় প্রমাণ।
তিনি বলেন, চকবাজার থানার এজাহার অনুযায়ী লুসি খানের সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ এখনও নিখোঁজ। এই মহিউদ্দিনের সাথে লুসি খান প্রতিদিন তার ফিরিঙ্গী বাজারের ঘর থেকে বের হন, গত ২২ মার্চ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে, ছবি ও সিডি আমাদের কাছে আছে। যদি কারো এ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা দিতে পারব। এই চাঁদাবাজির নাটকটা কেন করা হলো প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, শাহাদাত হোসেনকে কেন জড়ানো হল? আশ্চর্যের বিষয়, একটা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হবে, আর তার আগেই থানায় গিয়ে লুসি খান এজাহার লেখা শুরু করলেন!
এডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, মুজাফফর এবং ফাতেমা জোহরার স্থায়ী ঠিকানা চন্দনাইশ উপজেলা। ডা. শাহাদাতের গ্রামের বাড়িও চন্দনাইশে। ফাতেমার কাছ থেকে লুসি খান ২০২১ সালের ৯ মার্চ তিন কোটি টাকার একটি জায়গা নিয়েছেন । চার আনা পয়সাও ওই মহিলাকে লুসি খান দেননি। রেজিস্ট্রি দলিলের নম্বর ৭৬১/২১। এক টাকাও প্রবাসী এবং তার স্ত্রীকে না দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে তার কাছ থেকে জায়গাটা হাতিয়ে নিয়েছেন লুসি খান। এই প্রবাসী দম্পতি প্রাপ্য টাকার জন্য বিভিন্নজনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাদেরকে অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন যে আপনারা চন্দনাইশে বাড়ি হিসেবে ডা. শাহাদাতের সহযোগিতা নেন। শাহাদাত হোসেন মানবিক বিবেচনায় লুসি খানকে তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য বলেন।
এডভোকেট সাজ্জাদ আরো বলেন, মামলা দায়েরের আগে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করার নিয়ম আছে। কিভাবে বা কাদের ইশারায় কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই অভিযোগকে মামলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেটা এখন চট্টগ্রামবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে গত ২৯ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে কাজীর দেউড়ি নুর আহম্মদ সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে পুলিশের অতর্কিত হামলার অভিযোগ এনে নিন্দা জানানো হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এমএ আজিজ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডা. শাহাদাত হোসেনের আইনজীবী এড. কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক এড. এএসএম বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. এনামুল হক এনাম। মামলাটির বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
ডা. শাহাদাত হোসেন ও মনোয়ারা বেগম মনিসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।। একই সাথে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরাকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, সদস্য এনামুল হক এনাম, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ আজম উদ্দিন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা, আব্দুল মান্নান, বিএনপি নেতা এড. ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, নূর মোহাম্মদ, সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, এড. মফিজুল হক ভুঁইয়া, মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু, কামরুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী, জেলী চৌধুরী, এড. জায়েদ বিন রশিদ, এড. তুহিন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন