কোরবানির ঈদের পর থেকেই চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্তদের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ সিট। সংকটেই রয়েছে আইসিইউ, এইচডিইউসহ বিভিন্ন সিটের। প্রতিদিনই কোন না কোন হাসপাতালের বারান্দায় রোগী-স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য। দেখা যাচ্ছে নিকট আত্বীয় স্বজন করোনা রোগীর অক্সিজেন সংকটের কারণে মারাও যাচ্ছেন অনেকেই।
করোনা আক্রান্তদের চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। নতুন করোনা ইউনিট করেও সামলাতে কষ্ট হচ্ছে হাসপাতালে। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ক্রমেই করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামেও প্রায় সব হাসপাতালেই আইসিইউ শয্যাও বাড়ানোর চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে বর্তমান সময়ে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। অক্সিজের সংকটসহ নানা উপসর্গ নিয়ে উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে সংকটের কারণে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তির জন্য আনা হলেও সিট সংকটেই পর্যাপ্ত চিকিৎসাও দিতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলার করোনা রোগীগুলো নিয়ে স্বজনরা চট্টগ্রাম নগরীর হাসপাতালগুলোতেই ভীড় করছেন। নিতে পারছেন না চিকিৎসা সেবা। ফলে করোনা রোগীরা বিভিন্ন হাসপাতালের বারান্দায়ও পড়ে আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৫টি ল্যাবে। তাতে করে স্বভাবতই শনাক্ত কমে এসেছে ৭৪২ জনে। এর মধ্যে নগরীতে ৬৪৯ এবং উপজেলা পর্যায়ে ৯৩ জন। অথচ, এর আগের দিনই চট্টগ্রামে ‘রেকর্ড’ ১ হাজার ৪’শ ৬৬ জন করোনা রোগী ছিল। তবে একই সময়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও কমে হয়েছে ৪ জনে। চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত বেড়ে ৮১ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে নগরীরতে ৬১ হাজার ৫৫৬ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ২০ হাজার ৪০৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৯৬২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরীতে ৫শ ৭৭ এবং উপজেলার বাসিন্দা ৩’শ ৮৫ জন।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষা কম করা হয়েছে। ফলে করোনা আক্রান্তও দেখা যাচ্ছে কম। মাত্র ৫টি ল্যাবে ২ হাজার ১৩৪ জনের নমুুুুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৭৪২ জনের। তবে আবারও সাধারণ মানুষ টেস্টের আওতায় এলে এই সময়ে কি পরিমাণ সংক্রমণ ছড়িয়েছে তার ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
গত ২৪ ঘন্টায় উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীর খোঁজ মিলে ফটিকছড়িতে ২২ জন। এছাড়া আনোয়ারায় ২১ জন, সাতকানিয়া ও সীতাকুন্ডে ১২ জন করে, রাউজান ৭ জন, স›দ্বীপে ৬ জন, চন্দনাইশ ৫ জন, হাটহাজারী, পটিয়া ও মিরসরাইয়ে ২ জন করে এবং লোহাগাড়া ও বাঁশখালীতে ১ জন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনীয়য়ি কোন পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক্সিকিউটিভ কমিটির (ইসি) সেক্রেটারী অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই সিআইএমসিএইচ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, বায়প্যাপ মেশিন, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, হাই ফ্লোন্যাজাল ক্যানোলা (এইচএফএনসি) ও চিকিৎসক, নার্স ও সাপোর্টিং স্টাফের সমন্বয়ে একটি ডেডিকেটেড টিমের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। করা হয়েছে একটি বিশেষ টীমও। তিনি বলেন, গত ৩১ জুলাই কভিড-১৯ ইউনিটে রোগী ভর্তি আছেন ৮৯ জন। এইচডিইউ ও আইসিউ ৬টি বেডেই রােগী ভর্তি। তবে বর্তমানে ৯০ শয্যার সিট রয়েছে। এর মধ্যে আরো ৩০ সিট করোনা রোগীর জন্য বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তালুকদার জিয়াউর রহমান বলেন, করোনা রোগীর সিট খালি নেই। প্রতিনিদনই রোগী বাড়ছে। বর্তমানে আইসিইউ সিটের জন্য ১৫ থেকে ১৭ জন রোগী সিরিয়ালে রয়েছেন। কোনো কেবিনও খালি নেই। এছাড়াও আইসিইউ ১২টি বেড, এইচডিইউ এবং হাই ফ্লো অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে পর্যাপ্ত। তবে করোনারোগীদের জন্য বিশেষায়িত আরও একটি ফ্লোর চালু করেছে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যাবেন। এতে শুধু আইসিইউ সংকট নয়, করোনা রোগীও বাড়তে থাকায় সাধারণ শয্যায়ও পড়েছে সংকটে। কয়েকদিন ধরেই করোনা রোগীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে সাধারণ রোগীও।
জানা যায়, সরকারিভাবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে পার্কভিউ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতালেও করোনা রোগী রাখার সিট খালি নেই। আইসিইউ ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডেও নেই খালি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার