চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে ট্রেন, বাস ও প্রাইভেট গাড়ি করে আসছেন পরীক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেট-চট্টগ্রাম মুখী প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই আসছেন পরীক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম ঢাকা মুখী ট্রেনেই শুরু হয়েছে নানা সমস্যা।
এসব ট্রেনে করেই আসছে টিকেট বিহীন শত শত পরীক্ষার্থী। টিকেট বিহীন চবির পরীক্ষার্থীদের ট্রেন ভ্রমণের সময় ট্রেনের টিকেট চেকাররা (টিসি) কোন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই শত শত পরীক্ষার্থী মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসেন। এ সময় ভাংচুর, ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে থেকে ট্রেন অবরোধ, স্টাফদের আটকে রাখা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে আতংক এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন রেলওয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা। ফলে চবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শত শত পরীক্ষার্থী বিভিন্ন ট্রেনে বিনা টিকেটে প্রতিদিনই ভ্রমণ করতে পারেন বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
সর্বশেষ শনিবার ভোরে আসা ঢাকা-চট্টগ্রাম মুখী তূর্ণানিশিতায় এবং আগের দিন ঢাকামুখী সোনার বাংলা, মহানগর গোধূলি এবং তূর্ণানিশিতা ট্রেনে শত শত পরীক্ষার্থী টিকেট বিহীন ট্রেন ভ্রমণ করেছেন। এতে টিসিরা নিরাপত্তার কারণে অসহায়ের মতো দেখে থাকা ছাড়া কোন ধরণের উপায় ছিল না বলে জানান রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা।
ঢাকা থেকে সূবর্ণা এক্সপ্রেসে (শুক্রবার রাতে আসা) আসা ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ৫ দিন আগে ট্রেনের টিকেট কেটেও অনেক কষ্টে সিটে বসতে পেরেছি। বিনা টিকেটর যাত্রীরা আমার সিট দখল করে রেখেছিল। রেলের স্টাফরা এসে অনেক অনুরোধ করেই আমাকে বসিয়েছে। চট্টগ্রামে নাকি পরীক্ষা আছে, তাই বলে বিনা টিকেটে ভ্রমণ করবেন তারা? এটা কোন ধরণের আচরণ। দেশে কি কোন মা-বাবা নেই। তবে এসব নিয়ে সরকার বা রেল প্রশাসন আরও কঠোর না হলে দিন দিন বেড়েই যাবে বলে জানান তিনি। এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের সব ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীদেরই। যা ট্রেনে আসা যাত্রীদের রেল ষ্টেশনে অভিযোগের শেষ নেই।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা মুখীসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলোতে বিনা টিকেটে শত শত পরীক্ষার্থী ট্রেন ভ্রমণ করছেন। টিসিরা টিকেটের কথা বললেই ক্ষেপে উঠেন পরীক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে বিনা টিকেটে না যাওয়ার জন্য বাধা দিলে ইঞ্জিনের সামনে বসে ট্রেন আটকে দেন। তাছাড়া ট্রেন ছাড়ার সময় হলেই শত শত পরীক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে জোর করেই ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর ট্রেনে উঠে পড়েন। কিছু বলতে গেলে ভাংচুর, ট্রেন আটকে দেয়াসহ নানা হুমকি দেন তারা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মোহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, কয়েকদিন আগে লাকসামে সোনার বাংলা ট্রেন আটকে রেখেছিল পরীক্ষার্থীরা। এতে পরীক্ষার্থীদের কাছে বিনা টিকেটের বিষয়ে প্রশ্ন করলে উল্টো আমাদের স্টাফদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এসময় দীর্ঘক্ষণ ট্রেনও আটকে রাখেন তারা। পরে আমি সরাসরি উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে হয়েছে। তারপরও চেষ্টা করছি কোন ধরণের সমস্যা ছাড়াই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য। এসব কারণে রেলের আয় বা রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষসহ নানা ক্যাটাগরির ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই আসছে ভর্তি ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা। প্রতিদিনই বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভর্তি পরীক্ষায় হাজার হাজার পরীক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করছেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ আসছেন ট্রেনে, কেউ আসছেন বাসে, কেউ আসছেন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে, আবার কেউ বা আসছেন কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে মাইক্রোবাস যোগে।
স্বপ্নের এই বিদ্যাপীঠে ভর্তি হতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসছে অভিভাবকরাও। টিকেট বিহীন ট্রেনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-ঢাকামুখী সোলার বাংলা, মহানগর গোধূলি, মহানগর এক্সপ্রেস, তূর্ণানিশিতা, সূবর্ণা এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনে কম-বেশী পরীক্ষার্থীরা বিনা টিকেটেই ভ্রমণ করছেন। আগামী ২৪ আগস্ট পর্যন্ত চবিতে ভর্তি পরীক্ষা চলবে। সর্বশেষ গতকাল শনিবারও পরীক্ষা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর