চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন আর মাত্র সাত দিন। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বিরতিহীন প্রচারণায় ব্যস্ত হলেও বাকিদের প্রচারণা চলছে ঢিমেতালে। তৃণমূল বিএনপি’র দীপক কুমার পালিত, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশিদ মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া নামমাত্র প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম প্রচারণায় এই তিনজনের চেয়ে এগিয়ে আছেন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে বাচ্চুর নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে যায় নির্বাচনী এলাকা। নগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠ-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, হাট-বাজার চষে বেড়াচ্ছেন নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। তাকে জেতাতে নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তাদের সাথে প্রচারণায় যুক্ত হচ্ছেন সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও।
বাচ্চু’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক নইম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিরতিহীন প্রচারণা চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থী নিজে উপস্থিত হয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। যেসব জায়গায় প্রার্থী নিজে পৌঁঁছাতে পারছেন না সেখানে নগর ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের সাথে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দিচ্ছেন।’
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে উল্লেখ করার মতো নেতা-কর্মী না থাকায় একা একা প্রচারণা চালাচ্ছেন ‘ছড়ি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী রশিদ মিয়া। সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আসা এই প্রার্থী স্থানীয়দের সঙ্গী করে অলিগলি, চায়ের দোকান কিংবা ঘরবাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় তার প্রচারণা একেবারেই সীমিত বলা চলে।
জানতে চাইলে রশিদ মিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ওরা বড় দল। ওদের মতো করে প্রচারণা চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আমার মতো প্রচারণা চালাচ্ছি। ভোটাররা আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
এদিকে ‘সোনালী আঁশ’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিতও ঢিমেতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তার পোস্টার সংখ্যাও অনেক সীমিত। এই প্রার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পোস্টারের চেয়ে ব্যানার লাগানো হয়েছে বেশি। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আরো পোস্টার লাগানো হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ প্রচারণা চালাতে গিয়ে কর্মী সমর্থকরা পরোক্ষ হুমকির শিকার হচ্ছেন বলেও দাবি করেন এই প্রার্থী।
অনেকটা একই ঘরানার প্রচারণা চালাচ্ছেন ‘রকেট’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমার ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে লিফলেট বানিয়েছি। ভোটারদের ঘরে ঘরে লিফলেট পৌঁছানো হচ্ছে। নির্বাচনের দু’একদিন আগে পুরো এলাকায় পোস্টার লাগানো হবে।’
তবে এই তিন প্রার্থীর চেয়ে প্রচার প্রচারণায় কিছুটা এগিয়ে আছেন ‘লাঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম। গত কয়েকদিন ধরে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। ছোট পিকআপে করে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করেছেন। সেখানে ভোটারদের সাথে ভাব বিনিময় করছেন, নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
গত শুক্রবার বিকেলে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নগরীর সাগরিকা থেকে বিশাল শোডাউন নিয়ে নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। আলাপকালে এই প্রার্থী বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়ন করতে হবে। মানুষ জাতীয় পার্টি সম্পর্কে জানে। নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। মানুষ ভোটকেন্দ্রে গেলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো।’
গত ২ জুন এই আসনের এমপি ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া আসনটিতে আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। ১৫৬টি কেন্দ্রে সিসিটিভি বসিয়ে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই