চট্টগ্রামে গুম হওয়া দুই নেতার ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে স্বজন-সহকর্মীরা। ২০১০ সালের ৮ই নভেম্বর গুম হয়েছিলেন বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচা। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ৬ মার্চ ঢাকা থেকে ফেরার পর গুম হন ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির নেতা লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান এএসএম শহিদুল আলম সিরাজ। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর নতুন করে ফেরার আশায় অপেক্ষা করছেন তাদের পরিবার, স্বজন ও রাজনৈতিক সতীর্থরা। দ্রুত সময়ে ‘স্বৈরাচারের আয়না ঘর’ থেকে মুক্তি মিলবে দুই নেতার এমন প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের দলের জনপ্রিয় নেতা বোয়ালখালী বিএনপির সাবেক সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচা'কে ২০১০ সালের ৮ই নভেম্বর গুম করা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ নেই। গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা অবিলম্বে তাদের সন্ধান চাই’।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ফটিকছড়ি বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সারোয়ার আলমগীর বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের জোরপূর্বক গুমের শিকার যারা হয়েছেন তাদের মধ্যে সিরাজ চেয়ারম্যান অন্যতম। তিনি খুব জনপ্রিয় এবং ১৯৮৮ সালে খুব অল্প বয়সেই ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন যেহেতু স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, আমরা আশাবাদী যে সকল নেতা গুমের শিকার হয়েছে তারা ফিরে আসবেন এবং সিরাজ চেয়ারম্যান আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন স্বৈরাচারের আয়না ঘর ভেঙে’।
পরিবার সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৬ মার্চ বিএনপির ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পর চট্টগ্রাম ফেরার পথে নিখোঁজ হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সদস্য ও লেলাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম শহিদুল আলম সিরাজ। পরে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের খুলশী থানায় ও পাঁচলাইশ থানায় দুটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছিলেন। অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সাদা পোশাকধারী ব্যাক্তিরা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তুলে নেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি করলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচা। এরপর থেকে ১৪ বছরেও তার সন্ধান পাননি পরিবারের সদস্যরা।
ফটিকছড়ির সিরাজ চেয়ারম্যানের স্ত্রী সুলতানা পারভিন বলেন, ‘আমার স্বামী ফটিকছড়ি উপজেলার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। অল্প বয়সেই তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১২ সালের ৬ মার্চ রাতে তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে ফিরে আসছেন। এটা ছিল আমাদের শেষ কথোপকথন। সকালে তাকে ফোন দিলে তার বন্ধ পাওয়া যায়। দুই ছেলেকে নিয়ে গত ১২ বছর ধরে থানা, পুলিশ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বামীর সন্ধান চেয়েছি। কিন্তু তাকে আমরা এখনো পায়নি। ১২ বছর ধরে আমরা তার অপেক্ষায় আছি। শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে যেসব রাজনৈাতক নেতাকে গুম করা হয়েছে, তারা একে একে ফিরে আসছেন। আমরা মনে করি, আমার স্বামীও শেখ হাসিনার আয়না ঘরে বন্দি। আশাবাদী আমার দুই সন্তানের কাছে তাদের বাবাও ফিরে আসবেন’।
নজরুল ইসলাম বাঁচার ছোট ভাই হামিদুল হক মান্নান বলেন, ‘২০১০ সালের ৮ নভেম্বর আমার ভাই গুম হয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান পাইনি। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আমাদের অনেক নেতাকর্মী আয়নাঘর থেকে বের হয়েছেন। আরো অনেক নেতাকর্মী এখনো গুম রয়েছেন। তাই তাদের মধ্যে যদি আমার ভাই বেঁচে থাকেন তাহলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে সন্ধান চাই। আমার ভাই গুমের শিকার। তাকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে নিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের কোনো সন্ধান পেয়ে থাকেন তাহলে জানাবেন। আর আমার ভাইকে যদি মেরে ফেলেন সেটাও একটু জানাবেন। আমরা অপেক্ষায় আছি। গত ১৪ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। এ অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আকূল আবেদন করছি। শুধু এটাই জানতে চাচ্ছি, আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে নাকি বেঁচে আছে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল