বৈষম্যনিরোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহবানে জামাল খানে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রীতির আড্ডা। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ে তরুণদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এক অভিনব আড্ডার। আড্ডায় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধসহ সকল সম্প্রদায়ের নানা বয়স শ্রেণী পেশার মানুষ একত্র হয়েছেন সেখানে। এক সাথে আড্ডা দিচ্ছেন, বৈষম্যবিরোধী এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কথা বলছেন।
বিজয় সেন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বলছেন, বাংলাদেশে সকল ধর্মের সম্প্রীতি বজায় রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা।
ঋত্বিক বড়ুয়া নামে একজন জানাচ্ছেন, তিনি বাংলাদেশি, সংখ্যালঘু নন। এটাই তার একমাত্র পরিচয়। এই পরিচয়ে পরিচিত হতেই ভালোবাসেন।
সাইফুল্লাহ নাদিম বলছেন, সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই রাত জেগে তারা পাহারা দিচ্ছেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি, উপাসনালয় প্রভৃতি। কেবল সংখ্যালঘু পরিচয়ে তারা এটা করছেন না। তারা করছেন বাংলাদেশের কল্যাণে।
এভাবেই বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েদের কথায় উঠে আসে অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশের চিন্তা। তারা সকলেই ধর্মীয় পরিচয় বাদ দিয়ে বাংলাদেশের নানা সমস্যা সমূহকে সমাধান করতে এখন কাজ করে যেতে চান। দুর্নীতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, বিভিন্ন অনিয়ম, মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন এ আড্ডায়।
জানা যায়, গত সোমবার চট্টগ্রামের সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ও ফিল্মমেকার সাইদ খান সাগর ফেসবুকে ঘোষণা দেন, ধর্ম নিয়ে বর্তমানে কিছু মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে, তার বিপরীতে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা রোজা রেখে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের উপাসনালয়ে উপাসনা করবেন। তারপর সন্ধ্যায় ইফতারের সময়ে সকল ধর্মের বন্ধুরা নগরের জামালখানে খাবার খাওয়ার আহবান জানান। এ সময় তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ডা. মুকিত ওসমান চৌধুরী, শিক্ষার্থী বিন ইয়ামিন অনি, সাইফুল্লাহ নাদিম, কাজী রাকিব, মোবারক হোসেন সজীব প্রমুখ। তারা সবাই মিলে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই আহবান পৌঁছে দেন। তাতেই সাড়া দিয়ে মানুষ উপস্থিত হন জামালখানে। আড্ডায় বিভিন্ন স¤প্রদায়ের নানা শ্রেণী পেশার প্রায় ১৫০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সাইদ খান সাগর বলেন, গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এর পর এটা খুবই অনুমেয় ছিল যে, সংখ্যালঘু হামলার মত নিকৃষ্ট কিছু কাজ করে মানুষ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য দেশের এই শত্রুরা এসব কাজে নিজেদের জড়িয়েছেন। অথচ তাদের এই নিচু কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে এই নিরীহ মানুষদের। আমরা এই আড্ডা ডেকেছি এটুকু বুঝাতে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে বিশেষ কিছু নেই। আমরা সবাই প্রজাতন্ত্রের নাগরিক। তাই আমাদের সকলকে নাগরিক অধিকার দিতে হবে। এই নাগরিক অধিকার পেতে হলে ধর্মীয় পরিচয় ভুলে আমাদেরকে একত্র হতে হবে। কেউ যেন ধর্মকে ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু হামলার নামে যে ভুল তথ্য ও প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বহির্বিশ্বে, সে ব্যাপারেও সচেতন করে তোলাটা জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/এএম