চট্টগ্রামে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বিএনপির হাইকমান্ড। গত ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার করে দলটি, যারা দলের ক্লান্তিলগ্নে ছিল অত্যন্ত প্রহরীর ভূমিকায়। সর্বশেষ এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরানোর অভিযোগে জেলার তিন শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতির মাধ্যমে কঠোরতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে দলের কঠোর সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, দল ক্ষমতায় না আসার আগে যে হারে অনৈতিক কাণ্ডে জড়াচ্ছে তাতে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তে আগামীতে দলের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে কেউ আর সাহস পাবে না। পাশাপাশি ভুল তথ্যে কেন্দ্রে দিয়ে দলের ভিতরে অনেকে নিজ দলের প্রতিপক্ষের আক্রোশের শিকার হচ্ছে। তাই যে কোন তথ্য পেলে হুট করে বহিষ্কার না করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কেউ আর বহিষ্কার হবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, বহিষ্কার ও অব্যাহতি দলের একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা হচ্ছে যে, বিএনপি সমর্থকের দল। এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর বিএনপিকে বিশ্বাস করে। বিএনপিও জনগণকে বিশ্বাস করে। সুতরাং জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তায় বিএনপি সদা সর্বদা জাগ্রত। বিএনপি কখনো কোনো দখলদারিত্ব, কারো প্রতি জুলুম হয় এ ধরনের কোন অন্যায় অপকর্মের সাথে কাউকে জড়িত থাকতে দিবে না। সে যত বড়ই নেতা হোক না কেন। তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা জনগণের পাশে আছি। জাতির ক্লান্তিলগ্নে বিএনপি সব সময় পাশে ছিল এবং থাকবে।
তিনি বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি অপকর্ম করে তবে তার রক্ষা নাই। যে অপকর্ম করবে তাকে বিএনপি করার মতো সুযোগ আর হবে না। কেউ যদি মনে করে অতীত সরকার করেছে, আমরা বঞ্চিত ছিলাম এত বছর, আমরাও করবো তা কিন্তু হবে না। এরপরও যদি কেউ আওয়ামী লীগ বা কারো প্ররোচনায় পড়ে কোন ধরনের অনৈতিক কাজের দায়িত্ব নেয় বা অপকর্ম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘দলের ভিতরে গ্রুপিংয়ের কারণে অনেকে ছোট ঘটনাকে বড় করে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। কেন্দ্রে নানা লবিং তদবির করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তে উস্কানি দিচ্ছে। কারণ এতদিন যারা দলের পক্ষে মাঠে ময়দানে ছিল না তারা এখন সরব হয়েছে। যারা দলের জন্য বিগত ১৫-১৬ বছল জেল জুলুমের শিকার হয়েছে তাদের কোণঠাসা করে রাখার জন্য দলের ভিতরেই একটি অংশ সক্রিয়। কারণ চট্টগ্রামের প্রায় সব ইউনিটে বিএনপিতে একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। যে যার মতো লবিং করে নালিশ করছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। তাই কেন্দ্রে নালিশ গেলে সেটা যেন যাছাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যাথায় ত্যাগীরা হারিয়ে যাবে সুবিধাভোগী নেতাদের আক্রোশের কাছে।’
বিএনপি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকার মীর গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউস থেকে একে একে ১৪ বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিওতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়নকে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের গাড়ির চালক মনসুরও ছিলেন। বিএনপি নেতারা স্বশরীর উপস্থিত থেকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার স্বজনদের ব্যবহৃত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দলের অভ্যন্তরে এসব নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা। এর প্রেক্ষিতে শনিবার দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরেরদিন রবিবার রাতে তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি। দল ক্ষমতাকালীন সময়ে কোন ধরনের সুবিধা না নিয়েও দলের কঠিন সময়ে আগলে ধরেছেন এনামুল হক। যার কারণে দলের ভিতরে বাইরে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। এর আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৫ আগস্টের পরে নগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আসিফ চৌধুরী লিমনকে পদ থেকে অব্যাহতি, নগর যুবদলের সহসভাপতি নাসিম চৌধুরী, জাহিদ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল সোমবার নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের তার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল