প্রাকৃতিক কারণে দেশের চা বাগানগুলোতে প্রতিবছর জুন মাস থেকে চায়ের উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। তবে চলতি বছর বর্ষার আগে আগাম বৃষ্টিতে মে মাসেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। আবার মে-জুন মাসেও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পরবর্তী মাসগুলোতেও চায়ের উৎপাদন ভালো হচ্ছে।
চা খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবছর চায়ের সার্বিক উৎপাদন ইতিবাচক হবে। যা বছর শেষে দেশের বাগানগুলোর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য ড. পীযূষ দত্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগের বছরগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন অনেক কম হয়। বর্ষা শুরুর কিছু সময় পর বিশেষ করে জুন মাস থেকে উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ের দিকে যেতে শুরু করে। তবে এবার আগের তুলনায় বাগানগুলোতে মনিটরিং ও তদারকি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অগ্রিম বৃষ্টিও হয়েছে। এ কারণে গতবছর মে মাসের তুলনায় এবার দ্বিগুণের কাছাকাছি উৎপাদন হয়েছে, যেটাতে সবাই সন্তুষ্ট।’
চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে দেশের ১৭০টি বাগানে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজির লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে চা উৎপাদন হয় ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি। যা ছিল দেশের ইতিহাসে পণ্যটির উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও নানা প্রতিকূলতায় উৎপাদিত হয় ৯ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার কেজি চা। এরপর চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা।
চা বোর্ডের সর্বশেষ মাসিক বুলেটিংয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশের বাগানগুলোতে ১ কোটি ২৬ লাখ ১ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩ লাখ ৯ হাজার কেজি, ফেব্রুয়ারিতে ২৪ হাজার কেজি, মার্চে ১২ লাখ ৮৯ হাজার কেজি, এপ্রিলে ২৩ লাখ ৩১ হাজার কেজি এবং মে মাসে ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। তবে গত বছর একই মাসে উৎপাদিত হয়েছিল ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার কেজি চা।
চা নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল বোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ বলেন, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন খুবই কম হয়। সাধারণত জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে চায়ের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়। আর বছরের শেষ দুই মাসে উৎপাদন আবার নিম্নমুখী হয়ে যায়। তবে এবার মে মাসে প্রায় ৪০ লাখ কেজি বাড়তি চা উৎপাদন হওয়ায় বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহজ হতে পারে।
চা বোর্ডের এক কর্মকতা জানান, গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে চা উৎপাদনের বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। আবার নিলামকেন্দ্রে চায়ের দাম কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের কম হওয়ায় বাগান মালিকরা চা চাষে কিছুটা অনাগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন। তবে এবার চায়ের উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাগানগুলো থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি চা আসছে নিলামকেন্দ্রে। সর্বশেষ ১০টি নিলামে ৩২ লাখ ১০ হাজার ৩৬৬ কেজি চা বিক্রির প্রস্তাব করেছে ব্রোকার প্রতিষ্ঠানগুলো, যা গত বছর একই সময়ের নিলামে ছিল ২৭ লাখ ৬ হাজার ২৭৭ কেজি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই