খুলনার চাঞ্চল্যকর শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ে তিন আসামির মধ্যে ওমর শরিফ ও মিন্টু খানকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অপর আসামি শরিফের মা বিউটি বেগমকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে পৌনে একটায় খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের (ভারপ্রাপ্ত) বিচারক দিলরুবা সুলতানা এই রায় ঘোষণা করেন।
৫৯ পৃষ্ঠার রায়ের সারাংশটুকু বিচারক আদালতে পড়ে শোনান। সারাংশে বলা হয়: আসামি শরিফ ও মিন্টুর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। অপর আসামি বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে আনা দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো। বিচারক এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আসামি পক্ষকে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথাও বলেছেন। এই সময়ের মধ্যে আপিল না করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর কাঠগড়ায় উপস্থিত আসামিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এই রায়কে ঘিরে আদালত চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মহানগর পুলিশের উর্দ্ধতন একাধিক কর্মকর্তাকে আদালত চত্বরে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
এদিকে, ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ওমর শরিফের মা বিউটি বেগম খালাস পাওয়ায় আদালত চত্বরে উপস্থিত রাকিবের স্বজনরা ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা আসামিদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির গতিরোধ করে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হন।
রায় শুনে রাকিবের বাবা নুরে আলম কান্না জড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শরিফের মা বিউটি বেগমের কারণেই আমার রাকিবকে হারিয়েছি। কিন্তু সে খালাস পেয়ে গেলো। আমরা এই রায় মানি না।’ রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে থাকা রাকিবের মা ও বোনকে অচেতন হয়ে পড়তে দেখা যায়।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামগ্রিগভাবে এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে যে আসামি খালাস পেয়েছেন তার বিষয়ে রায়ের মূল কপি হাতে পাওয়ার পর পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মিন্টু খানের আইনজীবী তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ বলেন, এই রায়টি আবেগতাড়িত রায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। ওমর শরিফ ও তার মা বিউটি বেগমের আইনজীবী মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
উল্লেখ্য, মোটর সাইকেল গ্যারেজে কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণে গত ৩ আগস্ট বিকেলে খুলনা নগরীর টুটপাড়া কবরখানার মোড়স্থ শরীফ মটর্সে’র মধ্যে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেয়া কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে শিশু রাকিবের পায়ূপথে হাওয়া ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শরীফ ও মিন্টু মিয়াকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে শরীফের মা বিউটি বেগমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন নিহত রাকিবের বাবা মো. নুর আলম বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ২৫ আগস্ট এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক কাজী মোস্তাক আহমেদ এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। গত ১১ অক্টোবর বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। আদালত এই মামলার চার্জশিটভুক্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। ১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের (অার্গুমেন্ট) মধ্য দিয়ে রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ নভেম্বর, ২০১৫/মাহবুব/ রশিদা