কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় হামলাকারীদের কোপানোর ধরন দেখে ধারণা করা হচ্ছে তারা প্রশিক্ষিত। কোথায় আঘাত করলে দ্রুত মৃত্যু হয়, সেই প্রশিক্ষণ নিয়েই খুনিরা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ।
গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর উত্তর ধানমন্ডির কলাবাগানের তেঁতুলগলি এলাকার ৩৫ নম্বর বাসায় খুন হন সমকামীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার কর্মী জুলহাজ মান্নান (৩৫)। একই সঙ্গে খুন হন তনয় মজুমদার (৩৩)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত হামলাকারী যুবকরা খুনের পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে বলতে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, এ ধরনের আঘাতের পর কারও বেঁচে যাওয়া সম্ভব নয়। একই স্থানে উপর্যুপরি কয়েকটি আঘাত ছিল এবং সেই আঘাত মাথার খুলি কেটে মগজ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তনয়ের স্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে গেছে। তিনি বলেন, একই স্থানে অন্তত তিনটি আঘাত করলে মগজ স্পর্শ করে। খুনিরা ভালো করেই জানে এবং জেনেই আঘাতগুলো করেছে।
সুরতহাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুলহাজের মাথার পেছনে ও চিবুকের বাঁ দিকে ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ধারালো কোপের চিহ্ন রয়েছে। আঘাত এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে খুলি কেটে মগজ বের হয়ে এসেছে। মাথার পেছনে ডান দিকে কানের উপরের অংশেও পাশবিকভাবে কোপানো হয়েছে সমকামী অধিকারকর্মীকে। তার বাঁ হাতের মধ্যভাগে ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ পাওয়া গেছে, যা থেকে মনে হয়, স্বাভাবিকভাবেই কোপ ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
এদিকে, তনয়ের আঘাতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মাথার পেছনের অংশ থেকে ঘাড় হয়ে প্রায় এক ফুট পরিমাণ জায়গা প্রায় চার ইঞ্চি গভীর হয়ে কেটে গেছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। এছাড়া মাথার উপরের অংশেও পাঁচ ইঞ্চি দ্যৈর্ঘ্যের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে; কোপের কারণে কেটে গেছে খুলি।
এর আগে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, লেখক অভিজিৎ রায়, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়,প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনসহ বিভিন্ন হত্যার ঘটনায় লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা একই ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা