চট্টগ্রামের ‘মাদারবাড়ি’র হাতে তৈরি নান্দনিক জুতা এখন ফুটপাত থেকে নগরীর অভিজাত শপিং মলগুলোতে বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। মাত্র এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই গড়ে ওঠা প্রায় নয়শ' ছোট-বড় কারখানায় অন্তত ১৫ হাজার শ্রমিক আধুনিক ও নান্দনিক ডিজাইনের এসব জুতা-স্যান্ডেল তৈরি করে থাকেন। এরমধ্যে ছয়শ' কারখানা নিয়ে গঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপ। এসব কারখানা পূর্ব মাদারবাড়ি, পশ্চিম মাদারবাড়ি, নালাপাড়া, নিউমার্কেট এলাকার জলসা মার্কেট ও ফিরিঙ্গী বাজারে অবস্থিত। ক্ষুদ্র আকারে শুরু হলেও ইতোমধ্যে এখানকার বেশ কয়েকটি কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে এফ সি স্যান্ডেল, ডাটা বাজার, মাস্টার সুজ, ঢাকা বাজার সুজ, টাইটানিক সুজ, আর এ সুজ, আর এম সুজ, রিভিউ সুজ বেশ পরিচিত। এসব ব্র্যান্ডের জুতা-স্যান্ডেল তাদের নিজস্ব শোরুম ছাড়াও নগরীর অভিজাত শপিং মলগুলোতে পাওয়া যায়। এছাড়া এখানকার তৈরি জুতা বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহেও বিক্রি হয় পাইকারি মূল্যে।
চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে ‘মাদারবাড়ির’ জুতা হিসেবে অধিক পরিচিত এসব হাতে তৈরি জুতা স্বল্প হারে মধ্যপ্রাচ্যেও রফতানি হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপের অভিযোগ, ভারত ও চীনের নিম্নমানের জুতা-স্যান্ডেল বৈধ অবৈধ পথে প্রবেশ করে দেশীয় এই শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ঐতিহ্যের এই শিল্প ও এর কারিগর-শ্রমিকদের রক্ষা করতে হলে সরকারি উদ্যোগে একটি পৃথক পাদুকা পল্লী গড়ে তোলা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এতে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো দেশের বাইরে পাদুকা শিল্পের বাজার আরও প্রশস্ত হবে বলে জানান মালিক গ্রুপের সহসভাপতি মনজুর খান।
সরেজমিনে জানা যায়, মাদারবাড়ির এই কারখানাগুলোতে এক ডজনের নিচে জুতা বিক্রি হয় না। মান ও নকশানুযায়ী এক ডজন জুতার দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে এখানে পাঁচ শ’ টাকায় একজোড়া ভালোমানের টেকসই জুতা পাওয়া গেলেও নগরীর নামী শপিং মলগুলোতে একই জুতা বিক্রি হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। কারখানার মালিকেরা বলেন, এবার মেয়েদের জুতার মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফ্ল্যাট স্লিপার, অল্প হিল ও ব্যালেরিনা টাইপসের। ছেলেদের জুতার মধ্যে দুই ফিতা ও বেল্টের স্যান্ডেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। মেয়েদের বেশির ভাগ জুতাই রেক্সিনের তৈরি, ছেলেদের কিছু কিছু ডিজাইনের জুতা চামড়া দিয়ে বানানো হয়। পূর্ব মাদারবাড়ির নছু মালুম মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কর্মব্যস্ত মালিক ও কারিগরেরা। আরো প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই প্রতিদিন দুপুর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। এক ডজন জুতা তৈরির মজুরি হিসেবে একজন কারিগর পান ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। এবারের ঈদের জন্য শতাধিক ডিজাইনের জুতা তৈরি হচ্ছে এখানে। সোনালি-রূপালী রঙের পাথর, ভেলভেট কাপড় ও চুমকি বসানো জুতাই পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কারিগররা।
চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপের সভাপতি এরশাদ উল্লাহ কোরাইশী জানান, চট্টগ্রামের হাতে তৈরি জুতার কারখানাগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। ঈদের মৌসুমে আরও প্রায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করেন কারখানাগুলোতে। মূলত ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের শ্রমিকরাই এখানে কাজ করেন। উৎপাদিত জুতার পাইকারি বাজার চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোডের নূপুর মার্কেট। এখান থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় সব শপিং মল, উপেজলা, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও ফেনী, ময়মনসিংহের বিভিন্ন বিপনি কেন্দ্রে চলে যায়।
বিডি -প্রতিদিন/ ২১ জুন, ২০১৬/ আফরোজ