নতুন হল নির্মাণ ও পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায় জাতীয় চার নেতার নামে হল নির্মাণের দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ১৮তম দিনে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে ১ আগস্ট থেকে টানা আন্দোলনে নামেন এসব শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ১৮তম দিনের মাথায় সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এবং আগামী রবিবারও ধর্মঘট থাকবে বলে জানা যায়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা মূল ফটকসহ তিনটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ প্রতিটি অনুষদ ও বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এ সময় শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারলেও কোন শিক্ষার্থী প্রবেশ করতে পারেননি।
ছাত্র ধর্মঘটের কারণে সদরঘাট থেকে রায়সাহেব বাজারের মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তা অচল হয়ে পড়ে। এর প্রভাবে রাজধানীর অন্য সড়কেও দেখা দেয় তীব্র যানজট। এদিন বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা একযোগে পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দেন। কোনো বিভাগে ক্লাস হয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন বিভাগের মিডর্টামসহ কোনো ধরণের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের আশপাশে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা গায়ের কাপড় খুলে দেহের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চিকা মেরে তাদের দাবি জানান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান ছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের পর থেকেই জবির শিক্ষার্থীরা সেখানে হল নির্মাণের দাবি করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন হল নির্মাণের সুস্পষ্ট ঘোষণা এবং পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তরের দাবিতে সকাল থেকে ধর্মঘট পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। পরিত্যক্ত কারাগারের জমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার নামে চারটি হল নির্মাণ করার দাবি তাদের। এছাড়া সরকারের পরিকল্পনানুযায়ী সেখানে, জাদুঘর, গবেষণাকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার আহবান জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিষ্ঠার এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চলমান জঙ্গি ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বাসা-বাড়ি ও মেসে আতংকের মধ্যে জীবনযাপন করছে। অনেক বাড়িওয়ালা শিক্ষার্থীদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নিলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী চরম বিপদে পড়বেন।
এদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও কর্মসূচি ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার আশপাশ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কোতায়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলনে আমাদের কোন বাধা নেই। তবে তারা যেন নিয়ম ও শৃংখলা মেনে আন্দোলন চালিয়ে যায়। এছাড়া যাতে কোন ধরনের অপ্রতিকর ঝামেলা না হয় তাই আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে অবস্থান করছি।
জবির প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলন এটি যোক্তিক দাবি। তবে তা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে নয়। যদি কোন শিক্ষার্থী আন্দোলনের নামে বিশৃংখলা করে তার দায় দায়িত্ব প্রশাসন নেবেন না।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ