কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না। মিথ্যা অভিযোগ ও মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগ দেশের সর্বোচ্চ আদালত। যেহেতু আপিল বিভাগ এ রায় দিয়েছেন সেহেতু আমার পক্ষে এ রায়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটাই ন্যায়বিচার। তবে ভবিষ্যত, ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং সারা পৃথিবীর যেসব আইনজ্ঞ আছেন তারাই বলবেন- এ রায় সঠিক ছিল কি-না? তারা কি মন্তব্য করেন, সেটাই দেখার বিষয়।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘১১ নম্বরের যে অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছিল সেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধা, বালক জসিম উদ্দিন ছাড়াও আরও পাঁচজনকে হত্যার কথা বলা হয়েছিল। আপিল মামলার রায়ে আপিল বিভাগ জানিয়েছিলেন, জসিম ছাড়া বাকি পাঁচজনকে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি’।
তিনি আরও বলেন, ‘বাকি একটি মাত্র হত্যার জন্য সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে অন্তত এ অভিযোগে (কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যা) তাকে সাজা দেওয়া যায় না বলে আমি আদালতে বলেছি। আমি বলেছি, ফাঁসির সাজা হয়ে গেলে ভবিষ্যতে যদি প্রমাণিত হয়, তিনি জড়িত ছিলেন না, তাহলে নির্দোষ ব্যক্তি সাজা পেয়ে গেলেন- প্রশ্ন রাখেন খন্দকার মাহমুব।
মীর কাসের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছিলাম, মীর কাসেম আলী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে হাসপাতাল করে তিনি সেবা করেছেন। গণমাধ্যমে জড়িত ছিলেন। এটা তার সামাজিক কর্মকাণ্ড। তিনি তদন্ত চলা অবস্থায় বিদেশ গিয়ে ফিরে এসেছেন। কারণ, তিনি জড়িত ছিলেন না। তাই তার মনে কোনো সন্দেহ ছিলো না। তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকায় তাকে চরম দণ্ড তথা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত হবে না’।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘এই ব্যক্তিটিকে যদি আপনারা সাজা দেন আর ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় সাজাটি সঠিক হয়নি তাহলে এটি কিন্তু সংশোধন করা যাবে না। এবং আপিল বিভাগ সাজা দিয়েছেন। আপিল বিভাগ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগ সাজা বহাল রেখেছেন। এখানে আমার কিছু বলার নাই’।
‘কিন্তু যে সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে, আমি বারবার চিৎকার করে যেটি বলেছি, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে এ সাজা নেওয়া হয়েছে। এবং সেক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ বিবেচনা করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিবেচনা করবে এবং যারা আইন অঙ্গনে আছেন সারা বিশ্বে, তারা এই সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনা করবেন ও তারাই মন্তব্য করবেন, এই বিচার সঠিক হয়েছে কি-না।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ আগস্ট, ২০১৬/মাহবুব