জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রলীগের ক্যাডাররা একের পর এক অপরাধকর্ম করলেও প্রশাসন তাদের বিচারের ক্ষেত্রে বরাবরই গড়িমসি প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরাধ করার পর গুরু পাপে লঘু দণ্ড আর যথোপযুক্ত বিচার না হওয়ায় ছাত্রলীগও হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। অপরাধের অভিযোগ পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে না কোনো তদন্ত প্রতিবেদনই। দিনকে দিন এভাবেই জাবিতে বেড়ে চলেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সেই সাথে বাড়ছে অপরাধ করার প্রবণতা।
গত ৮ জুন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অপহরণকারীদের হাত থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করতে গেলে ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম। জাবি ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটোর নেতৃত্বে ১২-১৫ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী এ সময় শফিকুল ইসলামকে মারধর করে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে টিটোকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিস্কারের ঘোষণা দেয় জাবি শাখা ছাত্রলীগ। পাশাপাশি প্রশাসনের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল।
পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের আন্দোলনের চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২৭ জুন এক জরুরী সিন্ডিকেট সভায় মাত্র তিনজনকে সাময়িক বহিস্কার করে। এছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “তদন্তের কাজ শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কোনো সিন্ডিকেট সভায় প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।”
এদিকে প্রশাসনের সমালোচনা করে দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, “কোনো ধরণের প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে সুবিচার পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। তদন্ত কমিটিগুলো মূলত গঠিত হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে ঠান্ডা করে বিষয়টিকে কবর দেওয়ার জন্য। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলে দেখা যায় নামমাত্র সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। সেই বহিস্কারও আবার সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়না। বিষয়গুলো এখন এমন দাড়িয়েছে যে প্রশাসনের নিজস্ব কোনো বিচারবোধ বা বিচারের সদিচ্ছাই নেই।”
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র হলেও অবৈধভাবে মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থান করেন। তার বিরুদ্ধে এর আগে ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতন, রিক্সা চালক ও সাধারণ ছাত্রদের মারধর, আবাসিক হল প্রভোস্টকে লাঞ্ছিত, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলে গভীর রাতে এক ছাত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক এই নেতা। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার গভীর রাতে মীর মোশারফ হোসেন হলে’র ১১০/বি নং কক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/হিমেল-১৮