১৯৯৫ সালে প্রণীত মহাপরিকল্পনায় ২০১৫ সালের আগে চট্টগ্রাম নগরে কোনো ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে ২০১১ সাল থেকেই বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরু হয়ে উদ্বোধন করা হয় ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর। তাছাড়া নির্মাণ করা হয় কদমতলী ও দেওয়ান হাট ফ্লাইওভার। নির্মাণাধীন মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার।
একই সঙ্গে ২০০৯ সালে জাইকার অর্থায়নে ‘স্পেশাল এ্যাসিটেন্স ফর প্রজেক্ট ফরমেশন ফর চিটাগাং সিটি রিং রোড’ নামে পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেন সড়ক কাম বেড়ি বাঁধ নির্মাণ মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অযৌক্তিক বলে দাবি পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের। কিন্তু এটি এখন চলমান।
এভাবে চট্টগ্রামে অপরিকল্পিতবাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। ইতোমধ্যে সংশোধন করতে হচ্ছে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার। টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী হচ্ছে না উন্নয়ন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে নগর উন্নয়নে প্রণীত মহাপরিকল্পনা (মাষ্টারপ্ল্যান) বাস্তবায়নে নির্ধারিত ২০ বছর শেষ হয় ২০১৫ সালে। এই ২০ বছরে মহাপরিকল্পনার কোনো কিছু বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ আছে।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও নগরপরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে কোনো ফ্লাইওভার ছিল না। কিন্তু এখন তিনটি ফ্লাইওভারই চালু ও একটি নির্মাণধীন। এসবই অপরিকল্পিত। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল নগর উন্নয়নের স্বার্থে ‘চট্টগ্রাম পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্তপক্ষ’ প্রতিষ্ঠার। অপরিকল্পিত উন্নয়ন টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী হয় না। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনায় গৃহভিত্তিক জরিপও দরকার।
জানা যায়, গত তিন বছরেও আশানুরূপ যানবাহন চলাচল না করায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে কালুরঘাটমুখী র্যাম্প সংযোজনে উদ্যোগ নিয়েছে নিমার্ণকারী সংস্থা চউক। একই সঙ্গে বর্তমানে চালু থাকা কদমতলী ও দেওয়ান হাট ফ্লাইওভারও অনেকটাই যানবাহন শূন্য বলে নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন। এ দুটি ফ্লাইওভার নগরের যানজট নিরসনে কোনো অবদান রাখেনি। তাছাড়া নির্মাণাধীন মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার নিয়েও আছে নানা বিতর্ক এবং প্রশ্ন।
বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র্যাম্প সংযোজন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ফ্লাইওভারের মূল নকশা কালুরঘাট ও কক্সবাজার সড়ক দিয়ে দুটি সংযোগ ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর নকশায় পরিবর্তন এনে কেবল কক্সবাজার সড়কেই সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে ফ্লাইওভারটি পূর্ণতা পায়নি। এখন ফ্লাইওভারটি ওয়াই আকৃতির করে কালুরঘাট সড়কে সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম ‘ফ্লাইওভার নির্মাণের যথার্থতা এবং পরিবহন খাতের উন্নয়নে চট্টগ্রামের দুর্দশা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যে পরিমাণ লোক যাতায়াত করে তা চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক শূন্য ২ ভাগ। এক্ষেত্রে বাকি ৯৯ দশমিক ৯৮ ভাগ জনসংখ্যার স্বার্থকে উপেক্ষা টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থী। হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র ১৮ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ না করে ওই টাকা দিয়ে সমগ্র চট্টগ্রাম নগরীর প্রতিটি সড়কে পথচারী চলাচলে পর্যাপ্ত পথ সৃষ্টি, কার্যকর গণপরিবহন চালু, প্রয়োজনীয় সড়ক শাহ-আমানত সেতু থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ইনার রিং রোড, কর্ণফুলী নদীর উপর আরো দুটি সেতু নির্মাণসহ বহু উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব। এসব উন্নয়ন কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ