গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার রাতে টঙ্গী মডেল থানার এসআই অজয় কুমার চক্রবর্তী বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান টঙ্গী থানার ওসি মো. ফিরোজ তালুকদার।
তিনি বলেন, মামলায় কারখানার মালিক ছাড়াও মালিকের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মেয়ের জামাইসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর কারখানার কর্মী নিহত জুয়েলের বাবা আব্দুল কাদের পাটোয়ারি বাদি হয়ে কারখানার মালিকসহ ৮ জনের নামে টঙ্গী থানায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত ওই মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, দুর্ঘটনার পর হতাহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত দুইজন নিহতের প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহত ১৩ জনকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত টিমের সদস্যরা রবিবার দুপুরের টাম্পাকো কারখানা পরিদর্শন এবং কারখানার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তদন্ত টিমের সদস্যরা মিডিয়ার কর্মীদের সাথে কথা বলেননি।
রবিবার নবম দিনের মত সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিধ্বস্ত কারখানায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ১১ নিখোঁজ শ্রমিক ছাড়াও অজ্ঞাত কেউ থাকলেও তাদের সন্ধানে কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা। ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভবনের জঞ্জাল ড্রাম ট্রাক দিয়ে অন্যত্র সরানো হচ্ছে। তবে ভবনের ভিতরে থাকা রাসায়নিক বিস্ফোরণের আশঙ্কায় সতর্ক হয়ে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ধ্বংসস্তুপ থেকে এদিন কোন মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। ওই এলাকায় জনসাধারণকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, ধ্বংসস্তুপের ভেতরে মরদেহের খোঁজে আজও এসেছেন নিহতদের স্বজনরা। তারা চাইছেন তাদের প্রিয়জনের লাশ।
প্রসঙ্গত, শনিবার ভোর ৬টার দিকে ওই কারখানায় বিস্ফোরণের ফলে কারখানার ভেতরে আগুন ধরে যায়। এসময় ভবনের সামনের গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী, রিকশাচালক ও দুই যাত্রীসহ ১৪ জন ঘটনাস্থলে এবং পরে হাসপাতালে ১১ জন নিহত হন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৪ জন। এদের মধ্যে সনাক্ত হয়েছে ২৮ জন এবং পরিচয় মেলেনি ৬ মরদেহের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩৫ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন। আহতদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/মাহবুব