এবারের রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রেনে নিরাপদে যাত্রী পরিবহন করতে রেলওয়ে প্রস্তুত রয়েছে। নিয়মিত ট্রেন ছাড়াও পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে থাকবে ঈদ স্পেশালসহ ১৪টি বিশেষ ট্রেনও। অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করবে প্রতিদিন।
গত বছর প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ যাত্রী ট্রেন ভ্রমন করলেও এবার আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করবে রেলওয়ে। তাছাড়া এবার ঈদে নিরাপদে যাত্রী পরিবহনের জন্য নতুন ট্রেন পরিচালনা, নাশকতা প্রতিরোধ, টিকিট কালোবাজারী প্রতিরোধ, লোকোমোটিভ সরবরাহ, ছুটি বাতিলসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আগামীকাল সোমবার সকালে কমলাপুর রেলষ্টেশনে ২১ জুনের ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রয় উদ্বোধন করবেন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি। এসময় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়সহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। এ বছর একজন যাত্রী সর্বাধিক চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। ফিরতি টিকিট পাওয়া যাবে ১৯ জুন থেকে ২৩ জুন। একই সাথে আন্তঃনগর ট্রেনের অফ ডে প্রত্যাহার করে ২১ জুন থেকে ঈদের পূর্ব দিন পর্যন্ত সকল আন্তঃনগর সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও ট্রেন চলাচল করবে।
যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ভ্রমনের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ঈদের তুলনায় এবার বেশী যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। দুই অঞ্চলের ( পূর্ব ও পশ্চিম) মধ্যে বিশেষ ট্রেন ও ঈদের দিন স্পেশাল ট্রেন ব্যবস্থাসহ অতিরিক্তসহ প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী বহন করবে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলের দায়িত্বশীলদের ছুটি বাতিল করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রেলের অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় আগের তুলনায় ট্রেনের সময় অনেক কমিয়ে এসেছে। আশা করছি নিরাপত্তার মাধ্যমে যাত্রীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঈদের আমেজ ফিরে পাবে বলে জানান রেলপথ মন্ত্রী।
পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. আবদুল হাই বলেন, চট্টগ্রামের রেল স্টেশন থেকে ঈদের অগ্রীম টিকেট বিক্রয় শুরু হবে আজ। এতে অঞ্চলের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত থাকবেন। তবে এবারের ঈদে টিকেট কালোবাজারিসহ সকল প্রকার নিয়মশৃংখলা বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানান তিনি। একই কথা বললেন প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম) সরদার শাহাদাত আলীও।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদে যাত্রী সেবারমান বৃদ্ধি, নিরাপত্তা, টিকেট কালোবাজারি রোধ, নতুন কোচ সংযোজন, নাশকতা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পূর্বাঞ্চলে ঈদের স্পেশাল ট্রেনসহ বিশেষ ১০টি ট্রেন ও পশ্চিামাঞ্চলে ৪টি বিশেষ ট্রেন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল : ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা,২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। চাঁদপুর স্পেশাল-১ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। চাঁদপুর স্পেশাল-২ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। রাজশাহী স্পেশাল : রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। পার্বতীপুর স্পেশাল : পার্বতীপর-ঢাকা-পার্বতীপুর, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। সোলাকিয়া স্পেশাল-১ : ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার, ঈদের দিন। সোলাকিয়া স্পেশাল-২ : মংমনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-মংমনসিংহ, ঈদের দিন।
অপরদিকে ১৭ জানুয়ারি পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পঞ্চগড় রুটে নতুন আন্তঃনগর শাটল ট্রেন চালু হবে। সোমবার ১২ জুন বিক্রি হবে ২১ জুনের টিকিট। ক্রমান্বয়ে ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ জুন বিক্রি হবে ২২, ২৩, ২৪, ২৫ জুনের টিকিট। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে এ টিকিট বিক্রি শুরু হবে। মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টারসহ মোট ২৩ কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হবে। তাছাড়া ফেরত টিকিট : ১৯ জুন বিক্রি হবে ২৮ জুনের টিকিট। ক্রমান্বয়ে ২০, ২১, ২২, ২৩ জুন বিক্রি হবে ২৯, ৩০ জুন ও ১ এবং ২ জুলাইয়ের টিকিট। রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। এবার ঈদে রেলের দুটি ওয়ার্কশপের মধ্যে পাহাড়তলী ওয়ার্কসপ থেকে ৮৬টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ হতে ৮৯টি এমজি ও ৩৬টি বিজি সর্বমোট ১৭১টি, যার মধ্যে ১৩৫টি মিটারগেজ ও ৩৬টি ব্রডগেজ কোচ বহরে যোগ হবে। ১১৬১টি কোচের সাথে ১৭১টি কোচ যোগ হয়ে কোচ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩৩২টি। লোকোমোটিভ সরবরাহ করা হবে বিদ্যমান ২০৯ টিসহ মোট ২২৯টি। এতে ২১টির মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১৩টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৮টি অতিরিক্ত লোকোমোটিভ থাকবে। টিকিট কালোবাজারি রোধে ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, মংমনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশ, আরএনবি, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের তিনদিন আগে থেকে কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো গুডস ট্রেন চলাচলা করবে না। ঈদের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কতিপয় মেইল-একপ্রেস ট্রেন চলাচলারে ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না। এছাড়াও ২৫ ও ২৬ জুন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
অপরদিকে আজ রবিবার রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন দুই দিনের সফরে চট্টগ্রামে এসেছেন। প্রথমদিনে সিআরবিতে পূবাঞ্চলের জিএম আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে জিএম কনফারেন্স রুমে অঞ্চলের প্রধান ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। এরপর ওয়াার্কশপ, আরটিএ ও সিআরবি ভবন পরির্দশন করেন।