চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও আহবায়ক কমিটির নেতাদের নেই কোন ধরণের তৎপরতাও। এ অবস্থায় তিন মাসের আহবায়ক কমিটি পার করেছে ১৫ বছর ৮ মাস। ২১ সদস্যের এ কমিটিতে কয়েকজন ছাড়া সবাই রয়েছে নিষ্ক্রিয়।
এ কারণে দেখা দিয়েছে কমিটির নানান জটিলতাও। তাছাড়া কমিটি গঠনের ব্যাপারে কোন ধরণের উদ্যোগ না থাকায় নগরীর ওয়ার্ড-থানা কমিটিও হয়নি দীর্ঘবছরে। সবমিলে নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃত্ব শূন্যতা ও নতুন নেতা-কর্মী তৈরি করতে হিমশিম খেতে হবে বলে জানান হতাশাগ্রস্ত দলের অনেক নেতা-কর্মী। তবে চট্টগ্রামের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করে দ্রæত সময়ের মধ্যে কমিটি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু। একই কথা বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সাইফুল্লাহ আনছারি।
চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক এডভোকেট এইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, রমজানের ঈদের পরই নগরের সম্মেলন হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাংগঠনিক কাজও চলছে। এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতিতে নেই কোন গ্রুপিং ও মতপার্থক্য। গ্রুপিং রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃত্বস্থানীয় সবাই স্ব স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সাংগঠনিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি চট্টগ্রামের নেতাদের পরামর্শেই কাজ করছি। তবে নানাবিধ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বিভিন্ন কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলন করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিনহাজুল আবেদীন সায়েম ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আহবায়ক কমিটি গঠনের পর কিছুটা তৎপরতা থাকলেও বর্তমানে নেই বললেই চলে। শুরুতেই ব্যাপক কর্মকান্ডের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় থাকে এ কমিটি। তিনি বলেন, নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। ভেঙ্গে পড়ছে নেতা-কর্মীদের উৎসাহ এবং সাংগঠনিক স্প্রিটও। তবে আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে ত্যাগী, যোগ্য নেতারা সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বলেন, চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন। এসব নেতাদের সমর্থকরা নগর আহবায়ক কমিটিসহ বিভিন্নভাবে রাজনীতির মাঠে রয়েছেন। কমিটির দায়িত্ব কাকে দিয়ে, কাকে বাদ দিবেন সেই চিন্তায় এখনও কমিটি হচ্ছে না। আবার নিজস্ব অনুসারীরা মূল দায়িত্বে আসছেন কিনা সেটাই ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাছাড়া সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র আজম নাছির উদ্দিনের সমর্থকরাও কমিটিতে আসতে জোর তৎপরতায় থাকবেন। তবে দ্রুত এ কমিটি না হলে এ সংগঠন অস্থিতহীন হয়ে পড়বে বলে জানান তারা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন হয়েছে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। বর্তমানে এ কমিটির মেয়াদ চলছে ১৫ বছর ৮ মাস। দীর্ঘ এত বছরে কখনও হয়নি সম্মেলন, নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। হয়নি থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিও।
১৯৭২ সালে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নামে প্রতিষ্ঠিত ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগে রূপ নেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এ অঙ্গসংগঠনটির ২০০১ সালের পূর্বে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মকান্ড ছিল না চট্টগ্রাম নগরীতে। এতে অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়া উদ্দিনকে আহবায়ক, যুগ্ম-আহবায়ক কেবিএম শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদসহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রামে একটি প্রথম আহবায়ক কমিটি দিয়েই নগরে এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।
এ কমিটি গঠনের পরপরই ৪১টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে সাংগঠনিকভাবে কমিটি গঠন ও কর্মীসভার মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক কর্মকান্ড ও তৎপরতা। আহবায়ক কমিটি গঠনের কয়েক মাস পরেই বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সভা হলেও কার্যত ঝিমিয়ে পড়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড। দেখা যায়নি দৃশ্যমান কাজ। হয়নি দীর্ঘ বছরে কোন সম্মেলন।
আরো জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী রাজনীতিতেও অন্যান্য সংগঠনের মত স্বেচ্ছাসেবক লীগেও সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থকরা রয়েছেন। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনের সময় নগর রাজনীতিতে একক আধিপত্য থাকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারীদের। তখন আজম নাছির উদ্দিন সমর্থকরা সক্রিয়ভাবে না থাকলেও বর্তমানে বেশি প্রাধান্য পেতে পারে এ আশঙ্কায় কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের নেতারা।
বিডি প্রতিদিন/২৩ জুন ২০১৭/হিমেল