বরিশালের বানারীপাড়ার বেতাল গ্রামে ফুফু বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত ১৫ জুলাই দিবাগত রাতে জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো ২ মাসের অন্তস্বত্তা গৃহবধূ রুমি আক্তার। ধর্ষণের আগে তার স্বামীকে স্থানীয় একটি ক্লাবে তালাবদ্ধ করে রাতভর আটকে রাখা হয়। রুমি সেলিমের দ্বিতীয় স্ত্রী। এ ঘটনায় পরদিন ১৬ জুলাই তার স্বামী টেম্পো চালক মো. সেলিম বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই অভিযুক্ত ধর্ষক বানারীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সুমন হোসেন মোল্লাকে (এ ঘটনায় পরবর্তীকে তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়) বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসা থেকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ১৭ জুলাই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সুমন মোল্লা বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল ইসলামের আদালতে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিন দেয়।
জবানবন্দিতে সুমন ওই রাতে গৃহবধূ রুমি আক্তারকে ২ বার জোরপূর্বক ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন। এ মামলায় এখনো তিনি কারান্তরীণ। এ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় ছাত্রলীগ থেকেও তাকে বহিস্কার করা হয়।
এদিকে ১৭ জুলাই ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে সম্পন্ন হয়। ওই বিভাগের চিকিৎসক প্রভাষক ডা. মারিয়া হাসান ধর্ষিতার যৌনাঙ্গ ও গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করেন। একই দিন ধর্ষিতা সংশ্লিস্ট আদালতে ২২ ধারায় জোরপূর্বক ধর্ষণের জবানবন্দি দেন। ধর্ষণের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ধর্ষিতার বৃদ্ধা ফুফু আনোয়ারা বেগমও আদালতে ওইদিন সাক্ষ্য দেন।
কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে ধর্ষিতা ও ধর্ষক জোরপূর্বক ধর্ষণের কথা আদালতে স্বীকার করলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের কোন আলামত পায়নি শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা।
ধর্ষিতার মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্নকারী চিকিৎসক প্রভাষক ডা. মারিয়া হাসান বলেন, জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হলে ধর্ষিতার উরুর চামড়া কিংবা মাংশে দাগ থাকে। কিন্তু রুমির শরীরে এ ধরনের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ধর্ষিতাকে ২৪ ঘন্টা পর ডাক্তারি পরীক্ষা করালে ধর্ষণের আলামত পাওয়া দুরুহ হয়ে যায়। এর উপর ধর্ষিতাকে যদি একবার গোসল করানো হয়, তাহলে ধর্ষণের কোন আলামতই পাওয়া সম্ভব নয়। রুমির ক্ষেত্রেও ২৪ ঘন্টা পর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং ধর্ষণের পরদিন সকালে তাকে দীর্ঘক্ষণ পানিতে ফেলে রেখে গোসল করানো হয়েছে। এ কারণে জোরপূর্বক ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সে অতীতে যৌনকর্ম করেছে, সেটা প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেই বিষয়টি তারা ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।
শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, জোড়পূর্বক ধর্ষণ হলে ধর্ষিতার শরীরের কিছু আলামত থাকে। কিন্তু রুমি আক্তারের ক্ষেত্রে জোড়পূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার অতীত যৌনকর্মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বানারীপাড়া থানার ওসি মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, অভিযুক্ত সুমন হোসেন মোল্লা প্রোফেশনাল রেপিস্ট। ধর্ষণের পর ওই মেয়েটিকে জোর করে সে তার সামনে প্রস্রাব করাতে বাধ্য করেছে। এরপর সে তাকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে দীর্ঘক্ষণ পানিতে রেখে ধর্ষিতাকে গোসল করতে বাধ্য করেছে। এ কারণে ধর্ষণের অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। ধর্ষকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ধর্ষিতার জবানবন্দি এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে বিচার হবে। এই মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ওসি সাজ্জাদ।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার