বরিশাল নগরীতে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন। একটি খালের ওপর নির্মাণ হয়েছে সড়ক। খাল ভরাট এবং সরু নালা নির্মাণের কারণে নগরীর ময়লা আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাষণ বড় ধরণের হুমকিতে পড়েছে।
ডেঙ্গু সচেতনতার কারণে বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বড় বড় খাল ভরাট করে সরু নর্দমা নির্মাণ করায় নগরীর পয়ঃনিষ্কাষণের চাপ সামাল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বর্ষার সময় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
বিসিসি’র প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১০ সালে তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণ নগরীর নবগ্রাম-বটতলা খাল, ভাটার খালসহ অনেকগুলো প্রশস্ত খাল ভরাট করে সরু ড্রেন নির্মাণ করেন। ২০১১ সালে কীর্তনখোলা নদী থেকে নগরীতে প্রবাহিত ভাটার খালের সদর রোড পর্যন্ত নর্দমা নির্মাণ করা হয়। পরে সেই নর্দমার ওপর ঢালাই দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়। ৩০ থেকে ৩৫ ফুট প্রশস্থ খাল ভরাট হয়ে ২০ ফুটের সড়ক নির্মাণ করা হয়।
নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ডের বাসিন্দা মো. সাইফুল আহসান জানান, আগে ৩৫ ফুট প্রশস্থ খাল ছিল। তখন খালে ময়লা আবর্জনা থাকলে তা পরিষ্কার করা সম্ভব ছিল। কীর্তনখোলার প্রবাহও কিছুটা প্রবেশ করত। বর্তমানে ওই খাল নর্দমায় পরিণত হয়েছে। তার উপর নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। এখন পুরো অংশ ঢেকে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না।
বিসিসি’র এক প্রকৌশলী জানান, ইতি পূর্বে সিটি কর্পোরেশন যেসব পাকা নর্দমা নির্মাণ করেছে, তার অধিকাংশ স্থানে নীচের কাঠ ও বাঁশ অপসারণ করেনি। ভাটার খালের উপর নির্মিত সড়কের জন্য কাঠ ও বাঁশ অপসারণ হয়নি। এ রকম অনেক নর্দমার কাঠ-বাঁশ ভেতরে রয়েছে। ওই বাঁশ ও কাঠ না তুললে সড়কের নিচে থাকা খাল কিংবা ড্রেন বন্ধ হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
১৯৫৭ সালে বরিশাল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর থেকে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিধি বাড়ানোর নামে শুরু হয় খাল-পুকুর জলাশয় ভরাটের কাজ। এতে পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে থাকে।
বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, এক সময় বরিশাল নগরীতে অর্ধশতাধিক খাল ছিল। মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনধারা জলপথকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। অপরিকল্পিত নগরায়ন, যত্রতত্র দালান-কোঠা নির্মাণ করায় এখন অনেক খাল ইতিহাস। নগরীর বটতলা এবং ভাটার খাল ভরাট করে পানি নিষ্কাশনের নর্দমা নির্মাণ করছেন কর্তৃপক্ষ। প্রয় ৩৫ প্রশস্ত খাল ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে নির্মান করা হয় সড়ক। এতে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির-সনাক সহসভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা জানান, খাল উন্মুক্ত রেখে রাস্তা নির্মাণ করা উচিত। নগরীর সব খাল যাতে পুনরায় প্রবাহ ফিরে পায় সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
বিসিসি’র তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনিচুজ্জামান জানান, নগরীর ভাটার খালের উপর সদর রোড থেকে বান্দ রোড পর্যন্ত সড়ক-কাম নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে অনেক আগে। ভাটার খালের ওই নর্দমাটি অন্যান্য নর্দমার চেয়ে অনেক চওড়া। কিন্তু ওই খালের জেলা স্কুল থেকে বটতলা, দ্বীনবন্ধু সেন সড়ক পর্যন্ত খালের অস্তিত্বই বোঝা যাচ্ছে না। ওইসব এলাকা দিয়ে পানি নিষ্কাশনসহ ময়লা আবজর্নায় আটকে যায়। কর্তৃপক্ষ নর্দমার ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছে। নগরীর খাল পুনরুদ্ধারের সঙ্গে এই খালগুলো যুক্ত করা হলে সমস্যা সমাধান হতে পারে।
গত ৩১ জুলাই ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ঘোষিত বাজেট নগরীর ৪৩টি খাল পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণের প্রকল্প নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই দিন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, নগরীর সব খাল পুনরুদ্ধার করা হবে। অনেক খালের পাড়ে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দেওয়া হবে, যাতে আর কখনও খাল দখল হয়ে যেতে না পারে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প জমা দেয়া আছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শুরুর কথা বলেন মেয়র।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার