পোষা প্রাণীর প্রতি অমানবিক আচরণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে খোদ রাজধানীতেই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার নামে যাত্রীবাহী গাড়ি টেনে চলছে ঘোড়া। অথচ উপার্জন ক্ষমতা হারালেই এদের ভরণপোষণে গড়িমসি শুরু করেন মালিকেরা। এমনকি বেওয়ারিশ প্রাণী হিসেবে আশ্রয়হীন করে ছুড়ে ফেলা হয় রাজপথে।
রাজধানীর হাতিরঝিলে বেওয়ারিশ ঘুরতে থাকা অসুস্থ ঘোড়াটিকে উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন কয়েকজন প্রাণী অধিকার কর্মী। সেখানে টানা ৫ দিন চলে চিকিৎসা।
ঘোড়াটি দেখলে মনে হবে যেন নিথর দেহ নিয়ে অপেক্ষায় চূড়ান্ত বিদায়ের। হয়তো ক'দিন আগেও এটি ছিল কারও বিনোদনের খোরাক, নয়তো কারও কাছে ছিল অর্থ উপার্জনের বাহন। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া শরীর আর পারছিল না মালিকের চাহিদামতো সেবা দিতে। ফলে ঠাঁই মেলেনি আস্তাবলে এমনকি শেষবেলায় ভাগ্যে জুটছিল না নূন্যতম চিকিৎসাও।
কেয়ার ফর পজ প্রাণী অধিকার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ শামীম বলেন, দুঃখজনক হল, ঘোড়াটির মালিক এটিতে দিয়ে ইনকাম করিয়েছে, গাড়ি চালিয়েছে। খেলা দেখিয়ে টাকা ইনকাম করেছে। যখন দেখেছে ওকে দিয়ে আর কোনও লাভ হবে না তখন তাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে।
প্রাণী প্রেমীরা ভালোবেসে ওর নাম রেখেছিল ঝিল। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে একরাশ অভিমান নিয়ে নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ঘোড়াটি।
কেয়ার ফর পজ সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদ হোসেন বলেন, নির্দ্বিধায় কোনও কিছু না ভেবে আমরা যখন ওদেরকে বাচাতে যাই, তখন একটা জিনিসের বাঁধার সৃষ্টি হয় আর তা হল ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা।
মালিকের চরম অবহেলার শিকার হলেও এ আশ্রয়কেন্দ্রে ঘোড়াটির পরিচর্যায় ছিল না কোন কমতি। ক্ষতবিক্ষত দুর্বল শরীর পেয়েছে প্রাণিপ্রেমীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর চিকিৎসা। ওকে ভালোবাসা দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের কুকুরগুলোও। সারাজীবন গাধার খাটুনি খেটে শেষ সময়ে ঘোড়াটি নিয়ে গেছে ভালোবাসার ছোঁয়া।
বিডি প্রতিদিন/কালাম