মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বই। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক বই প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই মানসম্মত বই প্রকাশ ও পাঠকদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে পড়ুয়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় শ্রাবণ বইগাড়ির প্রথম আড্ডাটি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দীপনপুর বুকশপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে আগামী দেড় বছরে পাক্ষিক বিরতিতে মোট ৪০টি আড্ডার আয়োজন করবে শ্রাবণ প্রকাশনী। প্রথম আড্ডায় মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের লেখা ‘১৯৭১ : বিদেশী গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করছে ঢাকা ইনেশিয়েটিভ। এই উদ্যোগে মিডিয়া পার্টনার কালের কণ্ঠ, জিটিভি ও চ্যানেল আই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বই প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে পড়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, শ্রাবন প্রকাশনী এই সময়ে এসে যে উদ্যোগটা নিয়েছে তাতে আমি সমর্থন জানাই। অন্যরাও এগিয়ে আসবেন আশা করি।
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গার্ড অব অনারের নেতৃত্বদানকারী এসপি মাহবুব উদ্দীন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক দেশ ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রায় সব দেশের মানুষ ও গণমাধ্যম বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তিনি বলেন, তারা যেভাবে সমর্থন জানিয়েছিল সেই বিষয়গুলো আগামি প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আগস্ট মাস এলে অনেক ধরণের আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। আমার মনে হয় ওইসব আলোচনা সভার চেয়ে এমন আড্ডা ও বই পড়ার কর্মসূচি বেশি কার্যকর হবে।
লেখক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, আমার এই বই বিদেশী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে একটি সামান্য শুরু মাত্র। এ বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণা সময়ের দাবি। সরকার চাইলে এমন উদ্যোগ সহজেই নিতে পারে।
শ্রাবন প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী রবিন আহসান বলেন, আড্ডার মাধ্যমে ভালো বইয়ের খবর পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে চাই। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। বিনোদন জগতে একজন মডেল একটি বা দুইটি নাটক সিনেমা করে বা করার আগেই বড় বড় ছবিসহ কাভারেজ পান। আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখক যুগ যুগ ধরে লিখছেন। তাদেরকে গণমাধ্যমে কাভারেজ দেওয়া হয় না। মরার পর লেখকদের গুরুত্ব তুলে ধরে অনেক লেখালেখি হয়। আমরা চাই বেঁচে থাকতেই লেখকদের বড় করে মিডিয়াতে কাভারেজ দেওয়া হোক।
ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন কিছু বই আগেও প্রকাশ হয়েছে। তাদের থেকে মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের বইটি ব্যতিক্রম। তিনি শুধু বিদেশী গণমাধ্যমের কথাগুলো অনুবাদ করেই দায়িত্ব শেষ করেননি। সেইসঙ্গে তার পর্যবেক্ষণও যুক্ত করেছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ রাশিয়া। রাশিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে আলাদা গবেষণা হওয়া উচিত।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম