‘ঐহিক বাংলাদেশ’র তিন বছর পূর্তিতে কবিতার আসর ও আলোচনা অনুষ্ঠান হয়েছে। শনিবার বিকেলে শাহবাগের কাঁটাবনে ‘কবিতা ক্যাফে’ রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা হয় ‘লেডিজ কম্পার্টমেন্ট’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠান। শুরুতেই ‘ঐহিক বাংলাদেশ’র তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর কবিতার শব্দের দীপ্ত উচ্চারণে সকলকে জানানো হয় শুভেচ্ছা। একে একে কবিতা পাঠ ও আলোচনায় মূখর হয় প্রাঙ্গণ।
‘ঐহিক বাংলাদেশ’র আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে লেখক মুম রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক ও কবি জুয়েল মাজহার, কবি ফরিদ কবির, আয়শা ঝর্না, কবি ও সংবাদ কর্মী জাহানারা পারভীন, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষক ও কবি সাকিরা পারভীন, কবি জুনান নাশিত এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি আফরোজা সোমা।
প্রথমেই স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন করেন আয়শা ঝর্ণা। এসময় তিনি আমেরিকান কবি ও লেখক সিলভিয়া প্লাথের বিভিন্ন লেখা এবং তার জীবনী তুলে ধরে বর্তমান সমাজে নারী লেখকদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, শিল্প হতে হবে জেন্ডারের ঊর্ধ্বে থেকে। কিন্তু অন্যেরা যখন আমাকে সম্মোধন করে উনি একজন 'নারী লেখক' তখন আলাদা ভাবে ভাবতে হয়, আসলেই আমি একজন নারী, যেটা একটু অস্বস্তিকর ব্যাপার।
আয়েশা ঝর্ণার আলোচনার পর লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক আফরোজা সোমা। তিনি বলেন, নারীদের আলাদাভাবে বৈশিষ্ট্যকরণ হল কর্তৃত্ববাদী মানুষের প্রকাশ। সামগ্রিক অর্থে নারীরা এখনো নিষ্পেষিত। আমরা যদি পুরুষ কবিদের 'পুরুষ কবি' বলে আখ্যায়িত করি, তাহলে নিশ্চয় তারা সেটা সুন্দরভাবে নেবেন না।
কবি ফরিদ কবির বলেন, শিক্ষা, অর্থনৈতিক, নৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের চর্চা বাড়াতে হবে। আমাদের ঘর ও পরিবারের ভেতর থেকে নারীদের আলাদা এবং সমান মর্যাদার ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক। তাই অনেক ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষমতার শীর্ষে থাকলেও তাদেরকে পুরুষের প্রতিবিম্ব হিসেবেই দেখা হয়।
কবিতা পাঠের পর সাকিরা পারভীন বলেন, আমরা পত্রিকার বিভিন্ন ঈদ বা পূজা সংখ্যায় দেখি পুরুষদের ৫০টি কবিতা ছাপা হয়। অথচ সেখানে নারীদের কবিতা থাকে মাত্র তিন থেকে চারটি। এই জায়গাটাতেও আমাদের সমান অধিকারের জন্য ভাবতে হবে।
জাহানারা পারভীন বলেন, জীবনে আমি কখনো শুনিনি আমি একজন নারী রিপোর্টার বা নারী শিক্ষক। কিন্তু যখন লিখতে গেলাম তখন আমাকে শুনতে হয় আমি একজন নারী কবি।
জুনান নাশিত বলেন, একজন নারী হিসেবে আমাদের অতিরিক্ত কাজ করে বোঝাতে হয় যে আমরা কাজটার যোগ্য। অথচ একজন পুরুষের ক্ষেত্রে তা নয়। মেইনস্ট্রিম কখনোই একজন নারী লেখক কে লেখক হিসেবে যেন মেনে নিতে চায় না।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে'র সম্পাদক ও কবি জুয়েল মাজহার বলেন, কবি বা নারী কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে পরিচয় খণ্ডিত করা পুরুষের পেশি-শক্তির প্রাবল্য, সৃজনশীলতা বা মেধার প্রাবল্য নয়। নারী যখন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাকে নিজেদের প্রাবল্যে রাখার জন্য আলাদাভাবে আখ্যায়ন করেন। কিন্তু এই পরিচয় খণ্ডিত করা সুস্থতার লক্ষণ নয়। মানবজাতির সবথেকে বড় রোগের নাম পুরুষতন্ত্র। আমরা নিজেরা যদি না বদলাই, তবে রাষ্ট্র-সমাজ-শিক্ষক কেউই বদলাবে না। তাই সবার আগে আমাদের সমান অধিকারের চর্চাটা করতে হবে আমাদের ঘর থেকে। নারীদের আলাদা মর্যাদা দিয়ে।
অনুষ্ঠানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কবি ও লেখক মেঘ অদিতি, তুষার দাশ, সুমী সিকান্দার, মণিকা চক্রবর্তী প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা