মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকার তালিকায় বরিশালের প্রায় এক হাজার জনের নাম এসেছে। এর মধ্যে যুদ্ধাহত ও গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্ত্রীর নামও রয়েছে।
এছাড়া একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি, একজন সাবেক সংসদ সদস্য, একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, ২৬ জন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৭ জন সদস্য, শিক্ষক, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া গেছে প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষণ। অপরদিকে এই তালিকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৬ জনের নাম রয়েছে। যার মধ্যে ৬ জন নারী।
বরিশাল বিভাগের রাজাকার তালিকায় থাকা তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা সহ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, পটুয়াখালী জেলা বিশেষ শাখার সাবেক পরিদর্শক মো. ওবায়েদুল হক, বরিশালের বানারীপাড়া থানার সাবেক ওসি নজরুল ইসলাম, ঝালকাঠির সাবেক পরিদর্শক শাহ আলম (তালিকায় দুইবার নাম রয়েছে), রাজাপুর থানার সাবেক ওসি বদরউদ্দিন আহমেদ, বরিশাল সিআইডি ক্যাম্পের পরিদর্শক আবুল মোতালেব জোমাদ্দার, পরিদর্শক মো. আবু, সাবেক পরিদর্শক নজরুল ইসলাম, নলছিটির সাবেক ওসি মো. ইউসুফ আলী, সিআইডি পুলিশের সাবেক সদস্য শামসুল আলম ও শাহ আলম, সাবেক ওসি সেকান্দার আলি (তালিকায় দুই বার নাম রয়েছে), সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান, উজিরপুরের সাবেক এসআই একেএম নুরুল ইসলাম, পটুয়াখালী রিজার্ভ অফিসের সাবেক এসআই এস. ইসলাম, কোতয়ালী থানার সাবেক এসআই এমএ মান্নান (তালিকায় চার বার নাম রয়েছে), বরিশালের টিএসআই খন্দকার আব্দুল বারি, এসআই মান্নান, ফজলুল হক, ইসহাক, শামসুল হক, একেএম মতিউর রহমান, এএসআই আব্দুল মাজিদ, আব্দুস সাত্তার, আজাহার আলী এবং কনেস্টেবল আব্দুস সোবাহান ও গোলাম মাওলা।
রাজাকার তালিকায় বরিশালের সন্তান প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, সাবেক এমপি আব্দুল জলিল আকন, পাকিস্তান সেনা বাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন আমজাত, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর আ. লতিফ, ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা, ঠিকাদার আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মালেক, রংপুর জামায়াত ইসলামের প্রধান মোখলেছুর রহমান (মামলা নথি নম্বর আইসি ২১০/৭২), পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার এমএইচ খান, বাউফলের রাজস্ব সার্কেল অফিসের প্রধান সহকারী আসমত আলী মিয়া, বিএম কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল বাকী বিল্লাহ (তালিকায় দুইবার নাম), মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট আরসি কলেজের প্রিন্সিপাল এএইচ আমির হোসেন, কাশিপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এবিএম আমজেদ আলী, কচুয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ, পিরোজপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মহিবুল্লাহ, ধামুরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আর্শেদ আহমেদ এবং বরিশালের একে ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণির নামও রয়েছে।
এছাড়া ওই তালিকা বিশ্লেষনে ১২ জন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ৭ জন ইউপি সদস্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৬ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন নারী পাওয়া যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমজি কবির ভুলু বলেন, তালিকাটি আরও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা উচিত ছিল। তালিকায় অনেকেই রয়েছেন, যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। ভাষা সৈনিক এবং শহীদের স্ত্রীর নামও রয়েছে রাজাকারের তালিকায়। আবার তালিকায় নাম আসা অনেকে ওই সময় পিস কমিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এগুলো স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারতো।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আরেক সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে রাজাকারের যে তালিকা দেয়া হয়েছিলো তার মধ্যে গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদের স্ত্রী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কিংবা ভাষা সৈনিকের নাম ছিলো না। তারপরও তাদের নাম কিভাবে এসেছে সেটা তাদের বোধগম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে রাজাকারের কোন তালিকা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়নি। তারপরও প্রকাশিত তালিকায় কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল