রংপুর অঞ্চলে দুই দফা বন্যায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির ১৭৩ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট, করতোয়া ও ব্রহ্মপুত্রসহ রংপুর অঞ্চলে বিভিন্ন নদ-নদীতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এই ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অঞ্চলের পাঁচ জেলায় রোপা আমন, আউশ, পাট, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে আমনের চারা সংকটে পড়েছে কৃষকরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফার বন্যায় ৮ হাজার ২০৯ হেক্টর এবং দ্বিতীয় দফায় ৬ হাজার ১৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটের। পাট ৬ হাজার ৪৪১ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। আউস ধানের ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৪৪১ হেক্টর, আমনের বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ২৪৪ হেক্টর।
আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও কাজ করছে। তারা ২২১ একর জমিতে নাবি জাতের বীজতলা করেছে। এছাড়া ভাসমান বীজতলা করেছে ৫০০ একর এবং ৩৬৮ জনকে ট্রে মাধ্যমে বীজতলা করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া ২৮ হাজার ২০ জনকে ১৪ প্রকার সবজি বীজ দেয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৯০০ জনকে সার ও বীজ দেয়া হয়েছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চাষি নুরুল ইসলামের বন্যায় সমস্ত বীজতলা তলিয়ে যায়। তিনি বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঘুরে দাঁড়ার চেষ্টা করছেন। তার মত কাউনিয়া-পীরগাছা উপজেলার অনেকেই ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
পীরগাছার কল্যানির বুলবুল মিয়া বাজার থেকে চারা সংগ্রহ করে জমিতে লাগিয়েছেন। কাউনিয়ার আফজাল মিয়াসহ অনেকেই বন্যার ধকল কাটিয়ে শাক সবজি বপন করেছেন। বন্যার পর রংপুরের কৃষকরা এভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে বন্যার পানি নেমে গেলে রোপনকৃত ধানের চারা পচে গেছে। অনেক চরের আমন ক্ষেতগুলো বালুর নিচে তলিয়ে গেছে। নতুন করে রোপণের জন্য চারা না থাকায় অনাবাদী পড়ে আছে এসব জমি।
কৃষকরা জানান, গত বছর এসব জমিতে আমন চাষ করে তারা বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পেয়েছিলেন। এ বার চারা না পাওয়া গেলে জমিতে ধান লাগানো সম্ভব হবে না। তবে অনেকে ধার দেনা করে হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ফসলের ফলন ও বাজার মূল্য বিবেচনায় এ বারের বন্যার প্রথম ধাপে (২০ জুন থেকে ৭ জুলাই) ১০৩ কোটি এবং পরের ধাপে (১০ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই) প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য নতুন করে বীজতলার বিশাল কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন