স্টকহোম জুনিয়র ওয়াটার প্রাইজে পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। ২৫ আগস্ট সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ‘স্টকহোম জুনিয়র ওয়াটার প্রাইজ ২০২০’ এর চূড়ান্তপর্বে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় বাংলাদেশ দল। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাপান এবং ডিপ্লোমা অব এক্সিলেন্স বিজয়ী ইউ এস এ।
বিশ্বের ২৯টি দেশের প্রতিনিধিদল এবারের প্রতিযোগীতায় আইডিয়া সাবমিট করে। তার মধ্যে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশসহ সেরা ১২টি টিমের আইডিয়া। সেরাদের যুদ্ধে বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে আদিত্য কুমার চৌধুরী এবং ইফতেখার খালেদ। দুজনেই মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী।
আদিত্য-ইফতেখারের প্রজেক্ট ছিলো ‘পানি বিশুদ্ধকরণে ওলিফেরা (সজনে বীজ) মিশিয়ে পাউডার তৈরি করা হয়। এটি ব্যবহারে অল্প খরচে পানির ময়লা এবং ব্যাক্টেরিয়া হ্রাস করা সম্ভব।
প্রতিবছর আগস্টে বিশ্ব পানি সপ্তাহে (ওয়ার্ল্ড ওয়াটার উইক) সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হয় জুনিয়র ওয়াটার প্রাইজ প্রতিযোগিতা। তরুণদের পানি এবং পরিবেশগত বিষয়ে জড়িত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে এ আয়োজন করা হয়। বিশ্বের ৩০ টিরও বেশি দেশের ১৫-২০ বছর বয়সী তরুণরা এতে অংশগ্রহণ করে। অন্যান্য বছর সুইডেনের স্টোকহোমে সরাসরি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও করোনা মহামারির জন্য সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে অনলাইনেই আয়োজন করা হয়েছে এবারের প্রতিযোগিতা।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন ‘ওয়াটারএইড তরুণদরে শক্ততিতে বিশ্বাস করে, আর এজন্যই আমরা ধারাবাহকিভাবে তরুণদরে ওপর বিনিয়োগ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি উদ্ভাবনী সমাধান প্রদানে তাদের সহায়তা করে যাচ্ছি। এ অর্জন সকল বাংলাদেশির জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’
আন্তর্জাতিক এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী তরুণদের পাঠাতে ২০১৫ থেকে বাংলাদেশ স্টকহোম জুনিয়র ওয়াটার প্রাইজের যাত্রা শুরু। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর ষষ্ঠ বারের মতো আয়োজিত হয় বাংলাদেশ স্টকহোম জুনিয়র ওয়াটার প্রাইজ ২০২০। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে মেধার লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় আদিত্য-ইফতেখার। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়।
বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর তানভীর আহমেদ (সিভিল ডিপার্টমেন্ট এবং ডিরেক্টর অফ আইটিএন, বুয়েট, পি এইচ ডিঃ এম আই টি, ইউ এস এ) এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলেন ‘এই প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদেরকে একটি গবেষণা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত সমন্বয় করে একটি ব্যবহার্য টেকনোলজি উপস্থাপন করতে হয়। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক এবং প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট এ স্কুল কলেজ পর্যাযয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এরকম প্রজেক্ট তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে পানি সংক্রান্ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতায় সাবলীলভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং করছে তা যথেষ্ট প্রশংসার দাবীদার।’
এই বছরের আদিত্য এবং ইফতেখারের প্রজেক্ট নিয়ে বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর মুহিদুস সামাদ খান (কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্ট, বুয়েট, পি এইচ ডি: মোনাস ইনিভারসিটি, অস্ট্রেলিয়া) বলেন,‘এই উদ্ভাবনটি পানি পরিশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্ভাবনীয় পণ্যটি জৈব কাঁচামালের তৈরি এবং খুব সহজেই দুর্গম এলাকা এবং শহরের উভয় জায়গায় খাবার পানির পরিশোধনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে, শিল্প কারখানার বর্জ্য পানি পরিশোধনের জন্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই এই আবিষ্কারটি পণ্য হিসেবে উচ্চ বাণিজ্যিক মূল্য বহন করবে।’
২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ডিপ্লোমা অব এক্সেলেন্সি অর্জন করেছিল টিম বাংলাদেশ। এই বছর সেই পথচলায় আরো একটি অর্জন যোগ হল। বাংলাদেশে এ প্রতিযোগিতার মূল আয়োজক হাউজ অফ ভলান্টিয়ার্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। সহযোগী আয়োজক ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং টেকনিক্যাল পার্টনার এসটেক্স।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ