হাতে লাকড়ি নিয়ে পানিতে ভিজে দ্রুত হেঁটে চলেছেন এক নারী। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জোহরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে এখনো খাবার রান্না হয়নি। লাকড়ি জ্বালিয়েই রান্না হবে দুপুরের খাবার। গত ৩ দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বিস্ফোরিত মসজিদ তল্লা এলাকায় এভাবেই চলছে রান্নার ব্যবস্থা।
রবিবার সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এই দৃশ্য দেখা যায় পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত মসজিদ এলাকায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৩ দিন ধরে কোনো রকম মাইকিং, ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস বন্ধ রেখেছে তিতাস। তাই ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার মানুষজন বাধ্য হয়ে করছেন বিকল্প ব্যবস্থা। রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে লাকড়ি, খড়কুটো।
তল্লা এলাকার গৃহিণী রেহানা আক্তার জানান, ৩ দিন ধরে গ্যাস নাই, রান্না তো থেমে থাকে না। যেভাবেই পারছি লাকড়ি-খড়কুটো জোগাড় করে রান্না করতে হচ্ছে। কেন বন্ধ-কবে খুলবে তাও জানা নাই। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েক শত পরিবারকে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। একই সাথে মসজিদের অভ্যন্তরেও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর থেকেই ওই এলাকার গ্যাস বন্ধ রেখেছে তিতাস।
অভিযোগ আছে, মসজিদ কমিটি তিতাসকে গ্যাস লিকেজের কথা জানিয়েছিলেন আরো ৮-৯ মাস আগেই। কিন্তু দাবি করা ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় সেই লাইনটি ঠিক করেনি তিতাস। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার। দগ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন, বাকি ১৩ জনের অবস্থাও শোচনীয়।
রবিবার তিতাস ফতুল্লা শাখার জেডএমও বলেন, তদন্তের আলামত রক্ষার স্বার্থে মসজিদ এলাকার দুইটি গ্যাসবাল্ব বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা আজকে লাইন খোলার চেষ্টাও করেছিলাম, কিন্তু তদন্ত সংশ্লিষ্টরা করতে দেয়নি।
কিন্তু যখন জানতে চাওয়া হয়, মাইকিং করেছেন কি না তখন তিনি বলেন, আসলে যেহেতু সবাই জানেই বিষয়টা তাই মাইকিং করার দরকার মনে করিনি। এমনকি কবে গ্যাস চালু হতে পারে সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। তদন্ত যতদিন, গ্যাস বন্ধ ততদিন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন