সাভার সরকারি কলেজের ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি স্থায়ীকরণ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ৬ থেকে ১০ বছরের অধিক সময় ধরে কলেজটিতে কর্মরত থাকার পরও চাকরি স্থায়ীকরণের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় পত্রিকাসমূহে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই অস্থায়ীভাবে যোগদান করেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
এরপর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি, অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদানসহ একাডেমিক সকল কাজ এবং জাতীয় কাজে নিয়োজিত থেকে কলেজ কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ মাসিক বেতন, ভাতাদিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন তারা। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে কলেজে ওই শিক্ষক ও কর্মচারীরা জরুরি আলোচনা সভা করেছেন।
সাভার সরকারি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মো. মাসুদ রানা বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করি। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর ২০১৩ সালের ১০ মে কলেজে যোগদান করি। নিয়োগবোর্ড গঠন করে দুই বছরের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা করা হয়নি।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কয়েক দফায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছি, যার তদন্তও হয়েছে। কিন্তু আদৌ চাকরি স্থায়ী হবে কিনা, তা কেউ বলতে পারছেন না।
কলেজটির শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ইমরান হোসেন রনি বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ জুন সারা দেশের ২৯৯টি কলেজের সঙ্গে সাভার কলেজও জাতীয়করণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সরকারিকরণের আগেই আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণের কথা। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস খান আমাদের ঝুলিয়ে রাখেন। এখন সরকারি চাকরিতে আবেদন করার বয়সও পার হয়ে গেছে। এই অবস্থায় স্থায়ীকরণ না হলে আমাদের লেখাপড়ার কোনো মূল্যই থাকবে না, পরিবারের কাছেও মুখ দেখাতে পারবো না।
রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা ফাহমিদা পারভীন বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়ায় আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অন্যরা খাটো করে দেখে। সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন স্থায়ীকরণ হচ্ছে না তা নিয়ে সকলেই শঙ্কায় আছি।
কর্মচারী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, প্রায় ১১ বছরের চাকরি জীবনে আমি কলেজটিতে জাতীয় পরীক্ষায়সহ সব ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে আসছি। আমার পরে যোগদান করে অনেকের স্থায়ী হলেও বর্তমানে চাকরি হারানোর ভয়ে আছি।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. সাদেক হোসেন বলেন, কলেজকে এবং শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবেসে কাজ করে যাচ্ছি। বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত হই, তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব। কারণ আমাদের এ চাকরির ওপর নির্ভর করে চলছে ২৪ জন শিক্ষক ও ১২ জন কর্মচারীর পরিবার। এ পরিস্থিতিতে আমরা যেন আত্মীকরণের আওতা থেকে বাদ না পড়ি, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে সাভার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ দিল আফরোজা শামীম বলেন, এই ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য একাধিকবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগবোর্ড গঠন করে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে নিয়োগ দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস খান একটি চিঠির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। বর্তমানে কলেজটি সরকারিকরণের ফলে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের (মাউশি) উপ-পরিচালক সৈয়দ আমীর আলী বলেন, সাভার সরকারি কলেজের ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ডিজি অফিস থেকে সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফাইলগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তী সময়ে সরকার এটা নতুন করে অ্যাডহক নিয়োগ জারি করবে এবং বর্তমানে যারা কলেজটিতে কর্মরত আছেন তারদেকেই সরকারিভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই