২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:৫৯

খুপরি ঘরে বাস করেও সরকারি বরাদ্দের ঘর পেলেন না সুমন-সাথী দম্পতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

খুপরি ঘরে বাস করেও সরকারি বরাদ্দের ঘর পেলেন না সুমন-সাথী দম্পতি

সহায়-সম্পদ না থাকায় দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে একটি গন-শৌচাগারের সেফটিক ট্যাকিংর উপর কোনমতে খুপরি ঘর নির্মাণ করে ৫ সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন সুমন-সাথী দম্পতি। স্বামী সুমন পঙ্গু। আশা ছিল মুজিববর্ষে গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া একটি ঘর পাবেন তিনি। কিন্তু না, তাকে কেউ বিবেচনায় রাখেনি। 

এখনও খুপরি ঘরে কোনমতে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন পেশায় সুইপার (মেথর) সাথী বেগম। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বাবুগঞ্জ বন্দরে গন-শৌচাগারের সেফটিক ট্যাকিংর উপর কোনমতে টিনের ছাউনি দিয়ে এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি খুপরি ঘরে বসবাস তাদের। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জীবিকার তাগিদে ২০০৩ সালে মাদারীপুরের কালকিনি থেকে স্ব-পরিবারে বরিশালের বাবুগঞ্জে আসেন সুমন-সাথী দম্পতি। নিজস্ব কোন জমিজমা কিংবা বসতি না থাকায় তারা বাবুগঞ্জ বন্দরের গন-শৌচাগারের সেফটিক ট্যাংকির উপর টিনের ছাউনি দিয়ে মানবেতর পরিবেশে বসবাস শুরু করেন। টিনের ঘরটিও এখন জরাজীর্ণ। স্বামী সুমন শারীরিকভাবে অক্ষম। 

মেথরের কাজ করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করেন স্ত্রী সাথী। এক মেয়ে ও ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে একটি মোবাইলের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করেন। করোনা প্রকোপের প্রথম দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ, সমাজসেবক আতিকুর রহমান এবং থানার ওসি মিজানুর রহমান কিছু খাদ্য সহায়তা করেন ওই পরিবারকে। এরপর আর কেউ তাকায়নি তাদের দিকে। 

মুজিব বর্ষে সরকারিভাবে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের খাস জমি সহ ঘর দেয়ার খবরে একটি ঘর পাওয়ার আশা করেছিলেন সাথী-সুমনের পরিবার। গত ২৩ জানুয়ারি বাবুগঞ্জ সহ সারা দেশের সকল জেলা উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের খাস জমি সহ ঘর দেয়া হলেও সেই তালিকায় নাম নেই গন-শৌচাগারের সেফটিক ট্যাংকির উপর বসবাস করা সুমন-সাথী পরিবারের। 

বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বাবুগঞ্জে ১৭০জন ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১১০টি ঘরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকী ৬০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। শীঘ্রই বাকী ৬০টি ঘরের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য জিলানী সাজোয়াল জানান, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা আবশ্যক। কিন্তু ওই দম্পতির জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। সময়ের স্বল্পতার কারণে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়নি। এ কারণে তারা ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত জমি সহ ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, কি কারণে ভূমি ও গৃহহীন ওই পরিবারের নাম সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা খতিয়ে দেখবেন তিনি। একই সাথে সুমন-সাথীর পরিবার ভূমি ও গৃহহীন হলে তাদের সরকারিভাবে যথা সম্ভব সকল সাহায্য সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। 

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর