মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে ভাতা পান রাজশাহী মহানগরীর এমন ১২৬ জন তাদের গেজেট নিয়মিত রাখার সুপারিশ পাননি। সম্প্রতি বেসামরিক গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত রাজশাহী মহানগর কমিটি এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নির্দেশনায় এই কমিটি মোট ১৬০ জনকে যাচাই-বাছাই করেছে।
এর মধ্যে ৩৪ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ৮৪ জনের আবেদন সরাসরি নামঞ্জুর হয়েছে। ২৬ জন গেজেট নিয়মিত করার আবেদন না করার কারণে তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়নি। এছাড়া আটজনের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্তি সিদ্ধান্ত এসেছে বলে কমিটি উল্লেখ করেছে। এর বাইরে আরও আটজনের ব্যাপারে অধিকতর যাচাই করে জামুকাকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে কমিটি। গত মঙ্গলবার প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এই প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। যারা সুপারিশ পাননি তারা প্রতিবেদনটি দেখার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
তারা শনিবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে পুনরায় যাচাই-বাছাই করার দাবি জানিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গায় রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্য সচিব ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এস মনিরুল ইসলাম। সুপারিশ না পাওয়া ব্যক্তিরা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিটির সভাপতি সফিকুর রহমান ২০১২ সালে নগরীর ২৬০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘ভুয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে জামুকায় চিঠি দিয়েছিলেন। এরপর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনে তার প্যানেল পরাজিত হয়। এই ক্ষোভ থেকে তিনি যাচাই-বাছাইকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে নাম সুপারিশ করেননি। তিনি কমিটির অন্যদের প্রভাবিত করেছেন।
সুপারিশ না পাওয়াদের একজন আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা তিনজন সহযোদ্ধাকে সাক্ষী হিসেবে কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু কমিটি প্রথমে আমার কথা শুনেছে, এরপর একজন একজন করে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে। ভেতরে কী হয়েছে আমরা কেউ জানি না। অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের কোথাও নেই যে এভাবে আলাদা আলাদা সাক্ষ্য হবে। যিনি অভিযুক্ত তার সামনেই সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। এটাই আইন। যাচাই-বাছাইকালে এই নিয়ম মানা হয়নি। তাই আমরা প্রকাশ্যে সবার সামনে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে আবার যাচাই-বাছাইয়ের দাবি জানাচ্ছি।’
যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ রজব আলীর বাবার নাম। সংবাদ সম্মেলনে রজব আলী বলেন, জেনারেল ওসমানী আমার বাবাকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল থেকে রিলিজ লেটার দেওয়া হয়েছে। কমিটির একজন সদস্য তার নিজের সার্টিফিকেটের সঙ্গে এসব মিলিয়ে দেখে আমাকে বলেছেন, ‘সব সঠিক আছে। তারপরও আমার বাবার গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়নি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পুনরায় যাচাই-বাছাই চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যাচাই-বাছাই কমিটির একজন সদস্যই বিতর্কিত। যাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে, সেই তালিকায় তার নামই দুই নম্বরে ছিল। তিনি সেখান থেকে নাম কেটে কীভাবে যাচাই-বাছাই কমিটিতে চলে এলেন? এই প্রতিবেদন বাতিল করা না হলে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাণ্ডার ডা. আবদুল মান্নান, রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল আজিজ মাস্টার, এফএ ফাউন্ডেশনের মহানগর সভাপতি আলতাফ হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই