আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাসচালক সুমন (২৪)। অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাজাদী তাহমিদা গতকাল শনিবার বিকালে এই আদেশ দেন। ঢাকা জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলন্ত বাসে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন আসামি বাসচালক সুমন।
গ্রেফতাররা হলেন- ঢাকার তুরাগ থানার গুলবাগ ইন্দ্রপুর ভাসমান গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আরিয়ান (২০), কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার তারাগুনা এলাকার মৃত আতিয়ারের ছেলে সাজু (২১), বগুড়ার ধুনট থানার খাটিয়ামারি এলাকার সুলতান মিয়ার ছেলে সুমন (২৫), নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার ধামঘর এলাকার জহুর উদ্দিনের ছেলে মনোয়ার (২৪) ও বগুড়ার ধুনট থানার খাটিয়ামারি এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সোহাগ (২৫) এবং বগুড়ার ধুপচাচিয়া থানার জিয়ানগর গ্রামের সামছুলের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০)। তারা সবাই তুরাগ থানার কামারপারা ভাসমান এলাকায় ভাড়া থেকে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল-নবীনগর মহাসড়কে মিনিবাস চালাত। আশুলিয়ার থানার গণধর্ষণের মামলা নং ৬২।
পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত তাদের প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ ছাড়া দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা শেষ হয়। শনিবার দুপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ওই তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা বলেন, ভুক্তভোগী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে এবং অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী নারায়ণগঞ্জে স্বামী ও সন্তান নিয়ে থাকেন। তিনি সেখানে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। তার স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাটে। আশুলিয়া থানা-পুলিশ ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারীর বোন মানিকগঞ্জে থাকেন। শুক্রবার তিনি বোনের বাসায় যান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জে নিজের বাসায় ফেরার জন্য তিনি বাসে ওঠেন। রাত আটটার দিকে আশুলিয়ার নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। বাসের জন্য তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত নয়টার দিকে নিউ গ্রামবাংলা পরিবহনের একটি মিনিবাসের চালকের সহকারী মনোয়ার ও সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম এসে টঙ্গী স্টেশন রোডের কথা বলে তার কাছে ৩৫ টাকা ভাড়া চান। তিনি মিনিবাসে উঠলে গন্তব্যে যাওয়ার আগেই সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। চালক বাসটি নিয়ে আবার নবীনগরের দিকে রওনা হন। এ সময় বাসের জানালা ও দরজা আটকে বাসের চালক, সহকারীসহ ছয়জন ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। টহল পুলিশ বাসটি থামিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই ছয়জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আশুলিয়ার থানার গণধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'এই মামলার অন্যতম সাক্ষী নাজমুল এখন মানসিক একটা ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। এ কারণেই মূলত এখনও রিমান্ডে চলছে। এদিকে সিজার লিস্ট সম্পর্কে তথ্য না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সাক্ষীকে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্ত কাজে সহায়তা করার জন্য অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তাদেরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, এই গাড়ির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। রোড পারমিট বাতিলের জন্য বিআরটিতে আবেদন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল