নানা অভিযোগে জর্জরিত ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। এবার অভিযোগ উঠেছে তাদের গিফট ভাউচারেও মিলছে না পণ্য। জানা গেছে, ইভ্যালির গিফট ভাউচার দিয়ে গ্রাহকদের কেনা পণ্যমূল্য বাবদ ব্র্যান্ডগুলোর পাওনা পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির গিফট ভাউচার গ্রহণ করা হবে না বলে ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে নোটিশ জারি করছে ব্র্যান্ডগুলো। সম্প্রতি ইভ্যালির গিফট ভাউচারে কেনাকাটার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে একটি ‘রঙ বাংলাদেশ’। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের উদ্দেশে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘আপনাদের কেনা গিফট ভাউচারের পেমেন্ট ইভ্যালি আমাদের পরিশোধ না করায় ভাউচারটি এই মুহূর্তে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে পেমেন্ট পরিশোধ করলে এই ভাউচার আপনি অবশ্যই ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারবেন।’ এ অবস্থায় ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানিয়েছে ‘রঙ বাংলাদেশ’। যদিও এ বিষয়ে ইভ্যালির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ট্রেন্ডজ, আর্টিসান আউটফিটার্স, ফিট এলিগ্যান্স, রিও ইন্টারন্যাশনাল ইভ্যালির গিফট ভাউচার গ্রহণ স্থগিত করে নোটিশ দিয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল আজহার আগে মার্কেট ও ব্র্যান্ডশপগুলো খোলার আগের দিন বুধবার ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে এমন ভার্চুয়াল নোটিশ ঝুলিয়েছে। কোন কোন ব্র্যান্ড ক্রেতাদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও সতর্ক করেছে। একইসঙ্গে নানা অনিয়মের কারণে ইভ্যালিসহ ১০টি অনলাইন মার্চেন্টে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন স্থগিত করেছে বেশকিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক।
এর আগে ইভ্যালির সম্পদের চেয়ে ৬ গুণ বেশি দেনা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক প্রতিবেদনে উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।
এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, গত ৯ জুলাই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞায় ইমিগ্রেশনে চিঠি দেয় দুদক।
জানা গেছে, ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী যিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন- এমন শঙ্কায় তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে ইভ্যালির অনিয়ম অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। পরে ইভ্যালির এই দুই কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে দুদকের কমিটি। শুক্রবার সে আবেদন আদালত ও পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) পাঠানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক