২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২০:৫৪

শেবাচিমে শুক্রবার ইনডোর ওয়ার্ডে ডাক্তার না থাকার অভিযোগ

রাহাত খান, বরিশাল

শেবাচিমে শুক্রবার ইনডোর ওয়ার্ডে ডাক্তার না থাকার অভিযোগ

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) বিভিন্ন আন্তঃওয়ার্ডে শুক্রবারসহ সরকারি ছুটির দিনে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না। এমনকি খোলার দিনেও অফিস সময়ের পর মিড লেভেলের ডাক্তার পাওয়া যায় না হাসপাতালে। এই সময়ে ইন্টার্ন ডাক্তারই ভরসা হাসপাতালের। তবে সরকারি ছুটির দিনে অতি জরুরি ছাড়া ইন্টার্নদেরও পা পড়ে না হাসপাতালের ২৪টি আন্তঃওয়ার্ডে। যদিও বাই রোটেশনে হাসপাতালে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার বিধান রয়েছে।

শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শেবাচিমের জরুরি বিভাগে যান ব্যবসায়ী মো. আজিম। দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার তার প্রেসারসহ শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আন্তঃওয়ার্ডে ভর্তি দেন। রাত সাড়ে ১২টার পর ৪র্থ তলার মেডিসিন ইউনিট-৩ ইউনিটে যাওয়ার পর একজন ইন্টার্ন চিকিসক তাকে একটা ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন। এ পর্যন্তই শেষ। এরপর থেকে আজ শুক্রবার সারাদিনেও ওই ওয়ার্ডে পা পড়েনি কোনো ডাক্তারের। 

শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মেডিকেলের পুরুষ ও মহিলা সার্জারি, প্রসূতি, শিশু, নাক-কান গলা ও চক্ষু বিভাগসহ অন্যান্য ওয়ার্ড ঘুরে সারাদিনেও ডাক্তার না পাওয়া আক্ষেপ শোনা যায় রোগী ও তাদের স্বজনদের। একই অবস্থা অন্যান্য আন্তঃওয়ার্ডেও। এমনকি পোস্ট এডমিশন ডে’তেও (ভর্তির পরের দিন রোগীকে খুঁটিয়ে পরখ কথা ডাক্তারদের) মিড লেভেলের কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না এসব ওয়ার্ডে। নামমাত্র একজন-দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে ওয়ার্ডের পুরো দায়িত্ব ফেলে রেখে ওইসব ওয়ার্ডগুলোর রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ইনডোর মেডিকেল অফিসাররা চুটিয়ে চেম্বার করেন বাইরে। অনেকে আবার দূরদূরান্তের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়ও যান ওয়ার্ডের দায়িত্ব ফেলে রেখে। 

শুক্রবারও ওই সব ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিড লেভেলের ডাক্তাররা নগরীর বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই বেলা চুটিয়ে রোগী দেখেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিন অনুসন্ধান করে সত্যতা পেয়েছে। তবে সামাজিক কারণে তাদের নাম দেয়া হলো না। এদিকে, মিড লেভেলের ডাক্তাদের অনুপস্থিতিতে ‘ব্যাগার’ খাটা (প্রক্সিদাতা) ইন্টার্নরা-ডাক্তাররাও পারতো পক্ষে ওয়ার্ডে পা দেন না। অতি জরুরি হলে ডেকে আনতে হয় তাদের। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগীরা বলেন, শুক্রবার এই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার ‘রেওয়াজ’ হয়ে গেছে। এ কারণে যেমন খুশি তেমনভাবে ওয়ার্ড চালাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। শিশু বিভাগের প্রধান সরকারি খোলার দিনেও আন্তঃওয়ার্ডে রাউন্ডে যান না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনরা। পরিচালক ও উপ-পরিচালক পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাও এসব দেখভাল করেন না। খোদ পরিচালকের বিরুদ্ধেও অফিস সময় শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর অফিসে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সকাল ৮টায় হাসপাতলের অফিস সময় শুরু হলেও তিনি অফিসে যান সকাল সাড়ে ১০টা এমনকি বেলা ১২টার পরও। গত এপ্রিল মাসে পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর এখন পর্যন্ত মেডিকেলের কোনো বিভাগ, ওয়ার্ড কিংবা দপ্তর নিজে পরিদর্শন করেননি আজ পর্যন্ত। 

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ইনডোরে সার্বক্ষণিক সিনিয়র-জুনিয়র ডাক্তার থাকার কথা। মেডিকেলের সব বিভাগগুলোর বিভাগীয় প্রধান হলেন মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা। তারা ডিউটি রোস্টার করেন। কে কোথায় কখন দায়িত্বে থাকে সেটা তারা ভালো জানেন। তারা কমপ্লেইন করলে যারা দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়।

হাসপাতালের সদ্য সাবেক পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, বাই রোটেশনে ইনডোর ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকতে হবে। চিকিৎসক সংকট আছে বটে, তারমধ্যেও রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে হবে। পরিবারের প্রধান যিনি আছেন তিনি একটু কঠোর হলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। 

৫শ’ শয্যার শের-ই বাংলা মেডিকেল ২০১০ সালে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত ১ হাজার শয্যার জনবল কাঠামো পাশ হয়নি। উপরন্তু ৫শ’ শয্যা হাসপাতালের ২২৪ জন চিকিৎসকের জায়গায় কর্মরত আছেন মাত্র ১১১ জন। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৮ শ’ রোগী ভর্তি থাকে এই হাসপাতালে। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর