১৭ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:৫৩

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি

মহানবি (সা.) এর ১৪৫১তম শুভাগমনে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহ্মদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্ট ঢাকার উদ্যোগে রবিবার বর্ণাঢ্য মিছিল (জুলুছ) করেছে। পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) এর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে হাজার হাজার মুসল্লি/রাসুল প্রেমিক আশেকানের অংশগ্রহণে হাতে কলেমা খচিত বিভিন্ন রং-বে রংয়ের পতাকা নিয়ে ইয়া নবি সালাম আলাইকা, মুস্তফা জানে রহমত ও ইসলামিক সঙ্গীত নতুন আবহ তৈরী করে। কাদেরিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গন হতে শুরু হয়ে শাহজাহান রোড, ইকবাল রোড, আসাদ এভিনিউ, আসাদগেইট, আসাদ এভিনিউ, নুরজাহান রোড, তাজমহল রোড, শিয়া মসজিদ, রিং রোড, শ্যামলী, খিলজী রোড, বাবর রোড হয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মোহাম্মদপুরস্থ কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসায় সমাপ্ত হয়।

কারেরিয়া মাদ্রাসা ময়দানে জুলুছোত্তর নুরানী মাহফিলে আল্লাম পীর সৈয়দ সাবির শাহ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আল্লাহ পাকের নিয়ামত সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ট নিয়ামত হাবিবের সৃজন। তার সৃজনে ধন্য করেছেন সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে। যার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না (আল হাদিস)। আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি। আল্লাহর রহমত ও করুণাপ্রাপ্তির কারণে খুশি উৎযাপন করা সকল সঞ্চিত এবাদত হতেও উত্তম এবং নবীজির শুভ জন্ম সংবাদে দাসীকে মুক্ত করে আনন্দ প্রকাশের বহিঃপ্রকাশ করায় আবু লাহাবের মত অভিশপ্ত কাফেরও প্রতি সোমবার ভয়াবহ শাস্তি হতে কিছুটা পরিত্রাণ পায়। একজন কাফের হয়েও মিলাদুন্নবী অর্থাৎ নবীর (দ.) জন্ম উপলক্ষে খুশি প্রকাশের কারণে আবু লাহাব যদি আল্লাহর এমন করুণা লাভ করে, তবে আমরা কেন এ মহান নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হব।

আঞ্জুমানের সেক্রেটারি আলহাজ্ব মো. সিরাজুল হকের স্বাগত, কেন্দ্রীয় আঞ্জুমানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন ও সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেনের শুভেচ্ছা বক্তব্যে মাহফিলে কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ, ট্রাস্ট বোর্ডের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারমান সুফি আলহাজ্ব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবু আহমেদ মন্নাফী, এ্যাডিশনাল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, জয়েন্ট সেক্রেটারি আলহাজ্ব মো. সিরাজুল হক, ঢাকা আঞ্জুমানের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. শহীদ উল্লাহ, সি. ভাইস-চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ফজলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আলাহাজ্ব মো. নুরুল ইসলাম রতন, সেক্রেটারি আলহাজ্ব মো. সিরাজুল হক, জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, এসিসটেন্ট সেক্রেটারি আলহাজ্ব মো. আব্দুল মালেক বুলবুল, ট্রেজারার আলহাজ্ব শোয়েবুজ্জামান চৌধুরী তুহিন, হাজী নুরুল আমিনসহ ঢাকা আঞ্জুমান ও গাউসিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ। 

মাহফিলে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সা.)’র তাৎপর্য্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া (কামিল) মাদরাসার অধ্যক্ষ কাজী আব্দুল আলিম রিজভী, মাওলানা মাহমুদুর রহমান চিশতী, মাওলানা মুনিরুজ্জামান মুফতী মাহমুদুল হাসান সহ দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। মাহফিল পরিচালনা করেন উপাধ্যক্ষ মুফতী আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক ও ড. মাওলানা নাছির উদ্দীনসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম। 
 
মাহফিলে বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে প্রিয় নবির (সা.) আর্দশিক চেতনার বিকল্প নেই। যেখানে অশান্তি, জঙ্গিবাদ উপস্থিত তার বিপরীতে প্রিয় হাবিবের দর্শনই যথেষ্ট। সর্বত্র রাসূলের দর্শন থেকে যোজন দূরে থাকার কারণে মানুষ পথভ্রষ্ট হচ্ছে। অশান্তি, অন্যায় ভরপুর আরবজাহানকে শান্তির নীড় তৈরীতে হাবিবের প্রচেষ্টা কখনো ব্যর্থ হয়নি। সর্বত্রে যিনি সফল তিনি হলেন আমাদের নবি। সুতরাং যিনি সফলতার চাবিকাঠি তাঁর অনুস্মরণই সকল সমস্যার সমাধান নিহীত।

জুলুছের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তারা আরও বলেন, নবী করিম (সা.) এ ধরায় আবির্ভাব মুহূর্তে জিব্রাইল (আ.) এর নেতৃত্বে অসংখ্য ফেরেশতা ‘জুলুস’সহ মারহাবা ধ্বনিতে ধরায় অবতরণ এবং নবীকরিম (সা.) হিজরত করে মদীনা উপকন্ঠে পৌছালে সানিয়াতিলবেদা নামক স্থানে মদীনাবাসীগণ জুলুছ সহকারে সালাত সালাম ও সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের অনুকরণে আমরা যদি রবিউল আউয়াল মাসে নবীজির সম্মানে জশ্নে জুলুছে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করি তাহলে অবশ্যই আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামত প্রাপ্ত হব। 

রাসুলে করিম (সা.) এর চল্লিশতম বংশধর কাদেরিয়া ত্বরিকতের উজ্জল নক্ষত্র যুগ শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব পাকিস্থান ছিরিকোট দরবার শরীফ এর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র.)’র নির্দেশে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্টের উদ্যোগে ১৯৭৪ সালে এদেশে সর্ব প্রথম জশ্নে জুলুছের প্রবর্তনের পরে তারই ধারাবাহিকতায় পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে হুজুরে করিম (সা.) এর এ ধরায় শুভাগমনকে স্বরণ করে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্টের উদ্যোগে প্রতি বছর ৯ রবিউল আউয়াল ঢাকা মহানগরীতে এবং ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রাম বন্দর নগরীতে জাক-জমক ও যথাযোগ্য মর্যাদার এর সহিত জশ্নে জুলুছে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে অনুপ্রাণীত হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা ও সিলসিলার পীর মাশায়েখদের উদ্যোগে সমগ্র বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জশ্নে জুলুছ ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন শুরু হয়। 

পরিশেষে খতমে গাউসিয়া ও মিলাদ শরীফ সমাপান্তে বাংলাদেশসহ সমস্ত মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় দোয়া করেন হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ ছাবের শাহ্ (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী)।

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর