অধিক লাভজনক হওয়ায় বরিশালে আখ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে সচ্ছলতা পাচ্ছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, ধানের ১০ গুণ লাভ হয় আখ চাষে। এ কারণে আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। তবে স্থানীয়ভাবে আখ সংগ্রহ ও চিনি কলে সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যাশিত মূল্য পাচ্ছেন না তারা। এ জন্য বরিশালে একটি চিনিকল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা। চিনি কল না থাকলেও লাভবান হতে আখ চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
চরের বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। এ কারণে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার লাকুটিয়া ও বাহেরচর এলাকার কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে ঝুঁকছেন উন্নত প্রজাতীর আঁখ চাষে। ধানের আয়ুকাল ৩ মাস এবং আখের আয়ুকাল ৭ মাস। এক মৌসুম আখ উৎপাদনে ২ মৌসুম ধানের সময় লাগলেও সার্বিকভাবে আখ চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক।
বাবুগঞ্জের লাকুটিয়া এলাকার আখ চাষি মো. মনির বলেন, ধানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি লাভ হয় আখ চাষে। ১০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করলে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় মাত্র ৩ হাজার টাকা। দুই মৌসুমে লাভ হয় ৬ হাজার। অথচ একই পরিমাণ জমিতে একই সময়ে আখ চাষ করলে লাভ হয় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। এ কারণে ধান ছেড়ে আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
একই গ্রামের আখ চাষি লিটন মৃধা বলেন, অন্যান্য ফসলের মতো আখ চাষে তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আগাছা দমন, পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ ও শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রয়োজন হয় আখ গাছের। তবে জলাবদ্ধতায় সর্বনাশ হয় আখের। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আখ চাষ হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কর্তন করা হয় ক্ষেতে উৎপাদিত আখ। এই অঞ্চলে সরকারি আখ (বাংলাদেশ সুগার ক্রপ ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত খড়া সহিষ্ণু ডিএসআরআই আখ-৪২ ও ৪৩) চাষ বেশি বেশি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাহেরচর গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন ও রহিম হাওলাদার বলেন, এই এলাকায় আখের উৎপাদন বেশি। এতে খুশি তারা। কিন্তু এ অঞ্চলে চিনি কল না থাকা কিংবা সরকারিভাবে আখ সংগ্রহ না করায় প্রকৃত বাজারমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। বাধ্য হয়ে আখ দিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন কৃষকরা। আখ চাষ বাড়ানোসহ বাজারমূল্য নিশ্চিত করতে বরিশালে একটি চিনি কল কিংবা সরকারিভাবে আখ সংগ্রহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাওফিকুল আলম বলেন, বছরে ২ কিংবা ৩ বার ধান চাষের চেয়ে একবার আখ চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ অঞ্চলে চিনি কল না থাকায় কৃষকদের আখ বাজারজাত করায় কিছুটা সমস্যার হচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ আখের গুড় তৈরি করে বাজারজাত করলে কৃষক অধিক লাভবান হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এ বছর বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৯৭১ মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪২২ মেট্রিক টন, ঝালকাঠিতে ১৮১ মেট্রিক টন, পিরোজপুরে ২৫৪ মেট্রিক টন, ভোলায় ৭৯৪ মেট্রিক টন, বরগুনায় ১২৭ মেট্রিক টন এবং পটুয়াখালীতে উৎপাদিত হয়েছে ১৮৯ মেট্রিক টন আখ। যা গত বছরের তুলনায় বেশি উৎপাদন বলে দাবি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
বিডি প্রতিদিন/এমআই