বাংলাদেশ রেলওয়ের মান-উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ১৮৮৯ জন গেইটকিপারের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি ৬ষ্ঠ দিনের মতো চলছে। এ সময়ের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় অথবা রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার কোনো সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শুরু হওয়া এ অনশন কর্মসূচি আজ শুক্রবার ৬ষ্ঠ দিনের মতো পালন করছেন কর্মীরা।
‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রেলপোষ্য এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৮৮৯ জন গেইটকিপার রাজস্বকরণ বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চল’ এর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করছেন কর্মীরা।
দীর্ঘ সময় অনশনের ফলে ইতোমধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং প্রায় শতাধিক গেইটকিপার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তাদের মধ্যে সিলেট সেকশনের ফাতেমা আক্তার, মনিরুল ইসলাম, কুলাউড়া সেকশনের সাজ্জাদ, টঙ্গির লাকী আক্তার, লিজা, ফেনীর হালিমা খাতুন, ফাতেমা আক্তার, কাওসার, রুবেল, যশোর সেকশনের চামেলি বেগম, সুমাইয়া, শ্রীমঙ্গলের আকুল মন্ডল, কাউছার আহম্মেদ অনিক, জামালপুরের কাকলি বেগম, লালমনিরহাটের হালিমা আক্তার, পলাশ, হাফিজ মিয়া, শায়েস্তাগঞ্জের ফরহাদ বারডেম হাসপাতাল, নিউরোসাইন্স হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের অনশনস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি আছে।
গত ১৪৪ ঘণ্টা ধরে কমলাপুরের খোলা আকাশের নিচে গেইট কিপাররা অনশন চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার কোনো সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গেইটকিপাররা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অনশনের কারণে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হলে তার দায় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কর্মসূচিতে গেইটকিপাররা বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নং-৪৭০ ই/গেইটকিপার নিয়োগ/প্রকল্প/সিই পূর্ব-২০১৬ (ডব্লিউ) তারিখ: ৩১/১০/২০১৬ইং, বিজ্ঞপ্তি নং-এসেট ৬০১/৫ (নিয়োগ) প্রকল্প সিই/পশ্চিম ২০১৬ (ডব্লিউ) তারিখ: ১৫/১০/২০১৬ইং মোতাবেক ১৮৮৯ জন গেইটকিপার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োজিত আছি। এর মধ্যে ৫৭২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ৫৫৫ জন রেলপোষ্য এবং ৩২৫ জন নারী গেইটকিপার রয়েছেন।
২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের কর্মরত গেইটকিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে চাকরি স্থায়ী করণে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বহুবার স্মারকলিপি দিয়েছি, চিঠি দিয়েছি, আমাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছি কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি।’
তারা বলেন, নিয়োগের সময় গেইটকিপারদের বেতন নির্ধারণ করা হয় সর্বসাকুল্যে ১৪,৪৫০/- টাকা। বিগত ৫ বছরে এ বেতন বাড়েনি। বেশির ভাগ গেইটকিপার তাদের নিজ জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় চাকরি করেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বাসা ভাড়া, পরিবারের ভরণপোষণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে প্রায় সকলের বয়স ৩২ বছর অতিক্রম করায় অন্য চাকরিতেও ঢোকার সুযোগ নেই। নং-মপবি/ক:বি:শা:/কপগ-১১/২০০১-১১, তারিখ: ০৩/০৫/২০০৩ ও নং-মপবি/ক:বি:শা:/মক-০১/২০০৩-২৮, তারিখ: ২২/০১/২০০৩ প্রজ্ঞাপন মূল্যে অস্থায়ীভাবে সৃজনকৃত পদ হইতে রাজস্ব খাতে প্রেরণ করা সম্ভব। অথচ আমাদের চাকরির মেয়াদ প্রায় ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমাদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন